Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

জীবন সফর

বাংলা গল্প

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bengali Stories    162    163    164    165    (166)    

জীবন সফর
লেখিকা- সুপ্রীতি ভট্টাচার্য
( মার্চ, ২০২২-এর একটি নির্বাচিত গল্প)


## জীবন সফর
তৃতীয় শ্রেণীর গাড়ী –অসম্ভব ভিড়, তাই এক কোণে গাদাগাদি করে বসে বলাইচাঁদ, যদুনাথের সাথে ধর্ম বিষয় নিয়ে তর্ক করছিলেন। বলাইচাঁদ হলেন কালীর ভক্ত শাক্ত, যদুনাথ হলেন বৈষ্ণব। যদুনাথ বলাইচাঁদকে বললেন, "যাই বলুন ধর্ম সাধনের পথ হল প্রেমের পথ। রক্তপাত ঘটিয়ে ধর্ম করা হয় না।"

বলাইচাঁদ ছেড়ে কথা বলবার নন, বললেন, "ধর্মের নামে সারা পৃথিবী জুড়ে যখন রক্তারক্তি হয়ে চলেছে তখন কোথায় গেল বৈষ্ণব বেটাগুলি, মায়ের কাছে একটা পাঁঠা বলি দিলেই রক্তারক্তি হয়ে যায়?"

নদীর ওপর ওভার ব্রিজ দিয়ে ট্রেন তখন কু -ঝিকঝিক করে চলেছে। পশ্চিম দিগন্তে নানা আকৃতির মেঘের খেলা আর তার সাথে সূর্যের রক্তিম বর্ণের দিকে যদুনাথের দৃষ্টি চলে যায়, "বলাইদা দেখুন প্রকৃতির খেলা; পরে ধর্ম নিয়ে তর্ক ঝগড়া করবেন।"

#
বিহারের একটি শহর। এই শহরে আমি ইতিপূর্বে যাই নি। অফিসের কাজে চলেছি। যদুনাথদা আর বলাইদার সাথে আমি ও। ওনারা সিনিয়র, আমি ওদের এ্যসিস্টেন্ট। ওভারব্রিজের শেষে গাড়ী স্পীড তুলল। বলাইদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "পাটনা আসতে বেশী দেরি নেই; ব্যাগ বিছানা গুছিয়ে নাও হে ছোকরা।"

আমিও সম্মতি সূচক মাথা দুলিয়ে বললাম, "আমারটা করা আছে স্যার, আপনাদেরটা গুছিয়ে দেব?"

Patna Junction এ ট্রেন ঘড়ি ধরে সকাল ৯টায় ইন করল। আজ শনিবার, কুলিদের ছোটাছুটি, প্যাসেঞ্জারের হুড়োহুড়ি; আমদের অত তাড়া নেই, তাই একটু খালি হবার জন্য বসে রইলাম। যদুনাথদা আমায় বললেন, "অমর জমিয়ে একটু চা পেলে ভাল হয়।"

আমি বললাম, "দেখছি স্যার..."

প্যাসেঞ্জারের পাস কাটিয়ে প্লাটফর্মের চত্বরে চা-ওলা একজনকে পাকড়াও করে নিয়ে সবাই মিলে চা খাওয়া গেল। ভিড় একটু কম হলে একজন কুলীর মাথায় তিনজনের সুটকেসগুলি দিয়ে কুলীর পিছ-পিছু আমরা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গিয়ে একটি ট্যাক্সি নিলাম। আমি কুলীকে তার পাওনা দিতে গেলে বলাইদা বললেন, "তুমি এখনও ছোটো, বড়দেরকে ডিঙিয়ে যাবার চেষ্টা কোর না।" কুলীর পাওনা যা হয়েছিল দিয়ে দিলেন বলাইদা।

ট্রেন থেকে নেমে আমরা যখন ট্যক্সি স্ট্যান্ডের দিকে আসছিলাম তখন যেন মনে হয়েছিল আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে মেজদার মেজ-শালা। বহুদিন আগে দেখা তাই ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না, তাই মন থেকে ঝেড়ে ফেলবার চেষ্টা করলাম। বহু আগে এই মেজ-শালা হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি, পুলিশে ডায়রি করা, সবই হয়; কিন্তু খোঁজ মেলে না। মেজ-শালার বিয়ে-থা হয়নি। তাই কিছুদিন খোঁজাখুঁজির পর সবাই যে-যার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। আর কোনও খবর কেউ পায় নি বা নেয় নি।

একটা ট্যাক্সি ধরা হল, ট্যক্সি পাটনা দানাপুর রোড পেরিয়ে নেহেরু নগর, হাইকোর্ট পেরিয়ে হনুমান মন্দিরকে ফেলে আমাদের হোটেলে এসে যখন ইন করল তখন ঘড়ির কাঁটা সকাল ১১-র ঘর ছুঁয়ে গেছে। যাই হোক, কলকাতার মেন ব্রাঞ্চ থেকেই হোটেল বুকিং করা ছিল। সুতরাং অসুবিধা কিছু হল না। হোটেলে দুটি পাশাপাশি স্যুট বুকিং নেওয়া হয়েছে। একটাতেই হয়ে যেত, কারণ বড়-বড় ঘরগুলি। বলাইদার কিঞ্চিত কারণ বারি সেবনের অভ্যাস আছে। মায়ের নামে প্রসাদ নিয়ে প্রায় প্রতি রাতেই কিছু যাত্রা-পালা করেন তবে নিদ্রা যান, অর্থাৎ ঐ সময় যত মনের ব্যথা বেদনা উগরন; আর যখন এই কাণ্ডগুলি করেন তখন সেগুলি গ্রামে-গঞ্জে ম্যারাপ টাঙিয়ে যে যাত্রা হয় তার থেকে 'বলাইচাঁদের অঙ্গভঙ্গি আর হাউহাউ করে কান্না' কিছুটি কম নয়। সেই সময় তার কাছে কেউ থাকলে তার অবস্থা কাহিল না হয়ে যায় না। সেবার হলদিয়ায় এই অবস্থাই হয়েছিল আমার।

আজ শনিবার, যদুনাথদার নির্দেশে হোটেলে পৌঁছে ব্রাঞ্চ অফিসের সাথে যোগাযোগ করলাম। আমরা যে কারণে কলকাতার হেড অফিস থেকে এসেছি তার কাগজপত্র ফাইল সব রেডি রাখতে বলি। বলাইদা, যদুনাথদা হলেন সিনিয়র অফিসর। ব্রাঞ্চ অফিসের কাগজপত্র দেখে ফাইল করে দিল্লিতে রিপোর্ট দেবেন। আমার কাজ সেগুলির ডকুমেন্ট laptop-এর file-এ রেখে দেওয়া।

ইতিমধ্যে হোটেল বয় এসে খাবার অর্ডার নিয়ে গেছে। আমাদের দুজনের ননভেজ্, যদুনাথদার ভেজ্। দুপুরের খাওয়ার পর সবাই একটু নিদ্রা দিলাম নিজেদের ঘরে। বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। বেয়ারা চা নিয়ে এসেছে। আমাদের ঘরে চা দিয়ে বলাইদার ঘরে বেল বাজাল। কয়েক বার বেল বাজাবার পর বলাইদা উঠে এলেন লালচোখে। হয়ত খাবার পরই দু-পেগ গলায় ঢেলেছেন।

সন্ধ্যার দিকে আমি আমার সিনিয়রদের থেকে অনুমতি নিয়ে একটু এধার-ওধার পাটনা শহর ঘুরতে বেরলাম। কিছুক্ষণ ঘুরে আর ভাল লাগল না একা-একা ঘুরতে, তাই হোটেলের পথ ধরলাম। হঠাৎ রাস্তার ধারে একটা জটলা দেখে এগিয়ে যাই। এগিয়ে গিয়ে দেখি রাস্তায় একটা বড় বাক্স পরে আছে। স্বাভাবিক ভাবে সব মানুষের কৌতূহল ঐ দিকেই। বাক্স বা ঐ-জাতীয় কিছু রাস্তায় পরে থাকলে আগের দিনে যেমন নিমিষে vanish হয়ে যেত স্তেয়কর্তা দ্বারা, এখন বাক্সে হীরে-মাণিক থাকলেও কেউ হাত লাগান না; সবাই সাধু বৃত্তি ধরেছেন; প্রাণ আগে, পরে হীরা- মাণিক। খানিক শোরগোলের পর পুলিশ দলবল নিয়ে এল। যথা সম্ভব সাবধানে বাক্স খোলার ব্যবস্থা করা হল। পুলিশের traing প্রাপ্ত কুকুর, বোমা পরীক্ষা করার যন্ত্র কোনও কিছুরই কমতি রইলো না। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, বাক্স থেকে বেরলো রাশি-রাশি টাকা। উপস্থিত জনতার তো চক্ষু চড়ক গাছ। এত টাকা তারা কোনও দিনও চর্ম চক্ষে বোধহয় দেখেনি। ৫০০ এবং ১০০০ এর নোটে ভরা ছিল বাক্স। প্রধানমন্ত্রীর কালো টাকার অস্ত্রোপচারের ফল স্ব-চক্ষে দেখে খুবই পুলকিত হলাম। এতদিন শুধুই কাহিল হয়েছি ব্যাঙ্কের লাইনে আর সকলর মত মুণ্ডপাত করেছি, এবার সেই টাকা রাস্তায় গড়াগড়ি দেখে মনটা বলে উঠল, সার্থক হয়েছে কালো টাকার অস্ত্রোপচার। পুলিশ দল বাক্স নিয়ে যাবার পর আমিও হোটেলের দিকে হাঁটা লাগালাম। ঘরে বলাইদা যদুনাথদারা TVদেখছিলেন। তাঁদেরকে এই খবরটা দিলাম। শুনে তাঁরা চমকে উঠল। ইতিমধ্যে এই খবর news chanel গুলোয় ছড়িয়ে পরেছে। সারা পাটনা শহরে হই-হই পরে গেছে। যদিও বাতিল নোট, তবুও CID বা পুলিশ তদন্ত তো হবেই। TV- র সংবাদে দেখাচ্ছিল বাক্স রহস্যজাল ভেদ করতে ইতিমধ্যে পুলিশ CID নেমে পরেছে। শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।

রাত্রি ৯টার পর হোটেলের বেয়ারা এসে dinner serve করে গেল। খাওয়ার পর আমরা খানিক সোমবার কিভাবে কাজটা করব তা নিয়ে আলোচনা করলাম, কিছুটা গল্প টাকার বাক্স ও তারপর কি হতে পারে সেই নিয়ে আলোচনা করলাম। আমি, যদুনাথদা TV দেখতে লাগলাম, আর বলাইদা নিজের ঘরে উঠে গেলেন। TV-র সংবাদে দেখাচ্ছিল বাক্স রহস্যজাল ভেদ করতে ইতিমধ্যে পুলিশ CID নেমে পরেছে। শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।

পরদিন সকাল ৮টার পর বেয়ারার বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল; চা নিয়ে হাজির। বলাইদার ঘরে চা দিয়েছে নাকি, খোঁজ নিলাম। সে বলল, "বেল বাজিয়েছি, দরজা খোলা পায়নি। যাবার সময় আবার দেখব।"

আমি তখন উঠে গিয়ে বেল বাজালাম বেশ জোরে। তখন সারা পেলাম। এসে দরজা খুলতে বললাম, "goodmorning...যদুনাথদা বললেন আপনাকে brush করে আমাদের ঘরে এসে চা খেতে।"

বলাইদা বললেন, "যাচ্ছি, যাও।"

চা খাওয়ার পর ঘরের TV টা খুলে news chanel এ দিলাম। বেয়ারাকে একটা English paper কিনে নিয়ে আসতে বললাম। কালকের বাক্স রহস্যটা জানার জন্য মনটা আমাদের সকলের উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। TV তে খবর এল, বাক্সর টাকা আসলে প্রধানমন্ত্রীর বাতিল নোটেরই অংশ বিশেষ। এই রকম বাক্স পাটনা ছাড়া আশেপাশের শহরেও ফেলা হয়েছে; সে খবরও TV- র news এ দেখা গেল। এখন CID দেখছে কেন তারা ফেলে গেল টাকার ব্যাগ? দলেতে ক'জন ছিল বা আছে?

যাই হোক, এই সব দেখতে-দেখতে বেলা গড়াল। বলাইদা, যদুনাথদা, আমি বাজারের দিকে গেলাম saloon এর সন্ধানে। কাল সোমবার, সকাল-সকাল অফিসের কাজ সারতে হবে। বাজারে যাবার পথে বলাইদাদের আমি বাক্স যেখানে পরেছিল তার spotটা দেখালাম। বাজারের পথেও বাক্স নিয়ে নানা রকম আলোচনা শুনলাম। যদুনাথদারা একটা কচুরির দোকান দেখে আমায় নিয়ে গরম কচুরি খাওয়াবার জন্য ঢুকলেন, বললেন, "চল অমর, কাল থেকে খালি হোটেলের খাবার খাচ্ছ... পাটনার কচুরি কেমন দেখি? খাওয়া যাক্।"

কচুরির দোকানটা বেশ বড় হোটেলের মত। আমরা একটা টেবিল নিয়ে বসলাম। হোটেলবয় এলে তাকে বলাইদা কচুরি, গোলাপজামের order দিলেন। খাবার টেবিলের পিছন দিকটা একটু অন্ধকার মত। হঠাৎ ওদিকটায় আমার চোখ চলে যায়, আবার দেখলাম যেন সেই মেজদার শালাকে; একমনে খাচ্ছে। ভাবলাম একবার গিয়ে কথা বলি। কিন্তু যখনই যাব-যাব ভাবছি সেই সময় আর একটি দশাসই গোছের লোক এসে সোজা ওর টেবিলের দিকে গেল তারপর কিসব বলাবলি করে উঠে বেরিয়ে গেল, যাবার আগে একটা পাঁচশ টাকার নোট manager এর টেবিলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেল। Manager 'change টা নিয়ে যান' বলে চ্যাঁচাতে লাগল, কিন্তু তারা আর ফিরে তাকালো না। আমি তখন ভাবতে লাগলাম আমি ঠিক চিনেছি নাকি, আমার কোনও বিভ্রান্তি হয়নি তো? এদিকে আমরা যখন খেয়ে বেরিয়ে আসছি তখন এক গাড়ী পুলিশ এসে দোকানের সামনে দাঁড়ালো। তারা manager কে কি সব জিজ্ঞাসা করলেন। Manager হাত নেড়ে কি সব বলল, তারপর যে টেবিলে মেজদার শালা বসেছিল সেইটা দেখালো। আমার বুকটা ধরাস করে উঠল। আমি এর আগে যখন স্টেশনে মেজ-শালাকে দেখি তখন যদুনাথদা বলাইদাদের ওর কথা বলিনি। কিন্তু এখন এটা দেখে, বিশেষত সবার মত ওঁরাও বুঝতে পেরেছে যে, যারা কচুরি খাচ্ছিল তাদের পুলিশ ধরতে এসেছে, তখন আমি খুবই ঘাবড়ে যদুনাথদাকে আস্তে করে বললাম, "আপনাদের একটা কথা বলার আছে..."

যদুনাথদা বললেন, "কি কথা অমর?"

"হোটেলে চলুন সেখানেই বলছি।"

হোটেলে ফিরে কি ভাবে কথাটা আরম্ভ করব, তা হাঁটতে-হাঁটতে চিন্তা করতে লাগলাম। আমার tension দেখে যদুনাথদার কিছু সন্দেহ হয়, উনি জিজ্ঞাসা করলেন "তোমার কি এমন হল যে, এমন চিন্তান্বিত মুখ?"

আমি চার ধারটা একবার দেখে নিয়ে বললাম, "মেজদার মেজ-শালা..."

"তার মানে?"

"মেজদার মেজ-শালা ছিল, যাকে পুলিশ খুঁজছে..." বলে চার ধারটা আর একবার দেখলাম; কেউ শুনে ফেলল নাকি।

যদুনাথদা চেঁচিয়ে উঠলেন, "কি বলছ?"

আমি তাঁকে থামিয়ে বললাম, "হোটেলে চলুন বলছি, রাস্তায় নয়।"

হোটলে ঢুকে ঘরে পৌঁছে আস্তে-আস্তে যেদিন ট্রেন থেকে নামলাম সেদিন স্টেশনের বাইরে মেজ-শালাকে দেখার কথা, এই মেজ-শালার বাড়ি থেকে গায়েব হওয়া, তারপর তার কোনও খোঁজ না পাওয়া, সবই সবিস্তারে বললাম। তাঁরা এটা শুনে বললেন, "তুমি যদি পুলিশকে এই ঘটনা বলো তা হলে বিশ্রীভাবে জড়িয়ে যাবে। তাছাড়া তুমি বলছো তাকে অনেকদিন পরে দেখছো, এই লোকই যে সেই লোক সেটাও বা তুমি নিশ্চিত হচ্ছো কি করে?"

আমি বললাম, "ওর মাথার গোল-মতো টাকটা দেখেই আমি নিশ্চিত।"

শুনে দুজনেই থ-মেরে গেলেন। বলাইদা বললেন, "তুমি তোমার মেজদাকে ঘটনাটা ফোন করে বল। তাঁদের কাছে জানতে চাও কেন বাড়ী থেকে চলে গিয়েছিল লোকটি?"

আমারও এই কথাটাই মনে হয়েছিল। বলাইদা বলাতে আমিও সেটাই করলাম। Mobile থেকে মেজদাকে ফোনে ধরলাম। শরীর স্বাস্থ্য খবর নেবার পর মেজ-শালার কথাটা পারলাম, আগে জানতে চাইলাম কেন বাড়ী থেকে চলে যায়, এখন সে কি করছে? মেজদা বলল শ্বশুরবাড়ির কেউই ওর খবর রাখে না। কারণ তারা জেনেছে কোনও একটা gang এর সাথে ও জড়িত। কয়েকবার বাড়িতে পুলিশ এসেছে এবং নানা তথ্য নিয়ে গেছে। আমি তখন মেজদাকে আজকের কথা অদ্যপান্ত বলি, আর এও জিজ্ঞাসা করি পুলিশকে জানাব কিনা? মেজদা বলল, "অমর, তুই নিজে ঝামেলায় জড়াস না। পুলিশ ঠিক খুঁজে নেবে, মাঝ থেকে কেন তুই ঝামেলায় পরবি?"

বলাইদারাও একই কথা বললেন। যাই হোক সেদিনটা কেটে যায়। পরদিন সোমবার আমরা সকাল-সকাল ব্রেকফাস্ট করে ব্রাঞ্চ অফিসের উদ্দেশ্যে বার হই। অফিসে পৌঁছতে ওই অফিসের ব্রাঞ্চ অফিসার খাতির করে বসালেন। তারপর ফাইল পত্র ঠিক করে দেখে নিতে লাগলেন বলাইদা-যদুনাথদা। আর আমি pen-drive এ ফাইল download করে নিলাম। দুপুরের lunch অফিসেই সারা হল। Branch officer এর সাথে lunch এর পর ফের নানা কাজ কিভাবে ভবিষ্যতে হবে তা-ই নিয়ে একটা meeting হল। এই সব সারতে-সারতে রাত্রি ৮টা হয়ে গেল। অফিস থেকে বেরিয়ে ফের হোটেল মুখো। আমাদের return ticket বুধবারের। তাই মাঝখানে একটা দিন হাতে সময় ছিল। আমরা তিনজন ঠিক করলাম পাটনার আশেপাশেটা একটু ঘুরে দেখে নেওয়া যাবে। Branch office একটা গাড়ী ঠিক করে দিলেন। সকাল ৮টার মধ্যে তৈরি হয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম গাড়ী নিয়ে। গাড়ী ও তার চালক দুইই মোটামুটি ভালই। চালক কাম guide। একই যাত্রায় পৃথক ফল। যাই হোক আমদের গাড়ী প্রথমেই নালন্দা অভিযানে গেল। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরে আমরা একটা বড় restaurant দেখে lunch সারলাম। সেখান থেকে আমরা পাটলিপুত্র গেলাম। পাটলিপুত্রর পর হনুমান মন্দির হয়ে হোটেলে ফিরতে-ফিরতে রাত্রি৮টা হল। পরদিন সকাল-সকাল বেরোতে হবে, এই জন্য রাত ১০টার মধ্যে শুয়ে পরলাম। যদুনাথদা বলাইদাকে বললেন, "বলাইদা আপনি সকাল করে উঠবেন, ঝামেলা যেন না হয়।"

বলাইদা বললেন, "আপনাকে চিন্তা করতে হবে না অত।"

পরদিন বলাইদার উঠতে যথারীতি দেরি। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আমরা গাড়ী নিয়ে station এ যখন পৌঁছলাম তখন train station এ in করে গেছে। নিজেদের reserve sit এর খোঁজ করে তারপর গিয়ে বসলাম। train ছাড়তে আধ ঘণ্টা দেরি। আমাদের sit জানলার ধারে। শেষ মূহুর্তে বাথরুমের দিকের দরজা দিয়ে দুইজন দাড়িগোঁফওলা হিপি type এর passenger ঢুকল। তারা পিছনের sit এ বসল। তখনই train টা ছেড়ে দেয়। আমি বিছানাগুলো পেতে দি বলাইদা যদুনাথদার। নিজেও বিছানা পেতে আরাম করে বসি। পরের station এ train in করতে আরও তিন-চারজন আমাদের কামরায় উঠলো। দুপুরের জন্য ভাতের order দেওয়া হল। veg plate নেওয়া হল। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের মধ্যে আমরা মোকামা জংশনে পৌঁছলাম। চা'এর জন্য চা-ওলাকে ডেকে তিনজনে চা খেলাম। বলাইদা-যদুনাথদা আবার নিজেদের মধ্যে নানা গল্প আলোচনায় মেতে উঠলেন। আমি শ্রোতা। সত্যি কথা বলাইদার কথা শুনতে-শুনতে আমরা এরমধ্যে ট্রেনের কামরায় কতজন ওঠা-নামা করেছে তার কোন হিসাব রাখিনি। ট্রেন যখন থামল সেই সময় আমাদের তিনজনেরই খেয়াল হল আমরা ক্রমশ মেদনিপুরের দিকে চলেছি। ট্রেনের কামরায় তখন লোক থই-থই করছে। এরপর প্রায় আধঘণ্টা পর মেদনিপুর জংশনে ট্রেন ইন করল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ পেছন দিকে, যেখানে ওই হিপিদের মত দুইজন বসেছিল সেখানে, একটা শোরগোল। পরিষ্কার বাংলায় লম্বা-বলিষ্ঠ ধাঁচের একজন ঐ হিপিদের বললেন, "আপনাদের এরেস্ট করা হল।"

প্রথমে একজন হিপি বলে ওঠে, "what!!"

সেই দশাসই লোকটি বলে, "কি what, arrest করা হল আপনাদের।"

লোক দুটিও বাংলায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, "কেন রে শালা, তুই কে আছিস, নিরীহ মানুষের সাথে টানা হ্যঁচড়া করছিস?"

ততক্ষণে ওদের চারধার থেকে ঘিরে ধরেছে সাদা পোশাকের পুলিশ। সেই বলিষ্ঠ মানুষটি হেঁকে বলল, "আমরা তোদের বাপ..."

ততক্ষণে কামরার সমস্ত লোক হাঁ হয়ে গেছে, কিছুটা আতঙ্কিতও বটে। আমরা দেখলাম যাদের এতক্ষণ আমরা passenger মনে করছিলাম দু-চারজন ছাড়া সবাই সাদা পোশাকের পুলিশ। চেঁচামিচি...হাতা-হাতি...পুলিশ রিভলভার বার করার আগেই হিপি দু'জন পকেট থেকে তাদের রিভলভর হাতে নিয়ে নিয়েছে। সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশের দল তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। তাদের হাত ধরতে-ধরতেই একজন হিপি গুলি চালিয়ে দেয়। গুলি ধাঁই করে গিয়ে একজন সাদা পোশাকের পুলিশের কাঁধে লাগে। সেই অবসরে এক অপরাধী পালিয়ে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেয়। তাই দেখে আমারা সবাই সচকিত হয়ে উঠি। আমি আর একজন ইয়ং ছেলে কামরার আরেক দরজা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে তার পেছনে ছুটি। বলাইদা-যদুনাথদা চেঁচিয়ে ওঠেন, "যেও না অমর!! ওদের সাথে রিভলভর আছে।"

কিন্তু আমার মাথায় তখন আগুন ধরে গেছে। ছুটে গিয়ে লোকটাকে জাপটে ধরি। তখন সে বলে উঠে, "অমর, আমায় ছেড়ে দে। নাহলে তোকেও মেরে দেব।"

আমি বলি, "তোমায় আমি ঠিকই চিনেছি তাহলে। তোমার এই সব কীর্তি, ছিঃছিঃছিঃ-দিলীপদা।"

ততক্ষণে পুলিশও এসে যায়। সবাই মিলে ধস্তাধস্তি করতে-করতে হিপি রূপি দিলীপদার চুল-দাড়ি খসে যায়। ততক্ষণে পুলিশ ওর হাত থেকে রিভলভর কেড়ে নিয়েছে। পরাস্ত হয়ে ক্ষুব্ধ ব্যাঘ্রর মত তখনও গর্জন করতে থাকল দিলীপ। আসলে আমরা কেউই বুঝতে পারছিলাম না হঠাৎ কোথা থেকে এই ঝামেলার আবির্ভাব। বলাইদা আর আমি এগিয়ে গিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশের একজনকে পাকড়াও করে জানতে পারি, অপরাধীরা ৫০০, ১০০০ র নোট ফেলতে এখানে এসেছিল। শুধু এখানেই নয় মোগলসরাই, বেনারসেও ফেলেছে। সকলেরই নিবাস কলকাতা।

গ্রীষ্মের ভোর ৫- ৩০, কিন্তু মনে হচ্ছে ৮টা বেজে গেছে। অমরের ঘুমটা ভেঙে গেল বেলের আওয়াজে। চারিধারটা দেখে মনে হল ৮টা বেজে গেছে, কাজের মাসি নিশ্চই এসে গেছে, বেল বাজাচ্ছে। অফিস যাবার সময় হয়ে গেছে। তড়াং করে এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল সে। আড়মোড়া ভেঙে চটিটা পায়ে গলিয়ে ঘর থেকে বেরতে-বেরতে আবার বেল বেজে উঠলো। মাসী তো দু'বার বেল বাজায় না। কে এল এখন? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৫-৪০। এতক্ষণে ও সচকিত হল। কে হতে পারে এখন? তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেখে একজন পুলিশ সঙ্গে একজন সাদা জামা পড়া অফিসার। অমর কিছু বলার আগেই পুলিশ অফিসার বলে ওঠেন, "অমরবাবু আপনার থেকে কিছু তথ্য জানবার জন্য আমরা এসেছি।"

অমর বলে, "কি তথ্য স্যার? আপনারা দয়া করে ভিতরে আসুন..."

"আমাদের কাছে তথ্য আছে দিলীপ বসু হরফে নাটু মজুমদার আপনার আত্মীয়। সেদিন আপনি ট্রেনের ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। আমরা এই কেসের তদন্তর সাহায্যর জন্য আপনার এখানে এসেছি।"

অমর সচকিত হয়ে বলে ওঠে, "হ্যাঁ, আমার সাধ্য মত নিশ্চয় করব, তবে দিলীপবাবু আমাদের আত্মীয় হলেও বাড়ী ছাড়া। বাড়ী ছেড়ে বহুদিনই চলে গেছে। ওর খবর আমরা কোথাও পাই না।"

অফিসার বললেন, "ওনার আর যে আত্মীয় আছে আপনি ছাড়া, তাদের নাম ঠিকানা আমায় দিন; আমাদের প্রয়োজন আছে।"

"নাম ঠিকানা আমি দিতে পারি, কিন্তু কোনও ফল হবে না।"

অফিসার তখন জোর দিয়ে বললেন, "আপনায় যা বলা হচ্ছে দয়া করে সেটাই করুন।"

তখন অমর তাকে মেজদার ঠিকানা আর ওর শ্বশুর বাড়ীর ঠিকানা দেয়। পুলিশ অফিসার বললেন, "আমরা এখন আসছি, পরে দরকার মত আসব। আপনি কোনও দরকার হলে এই নাম্বারে ফোন করবেন," বলে ফোন নাম্বার একটা দিয়ে ওনারা বেরিয়ে গেলেন।

ভোরের ঘুমটা ভেঙে যাওয়াতে মাথাটা ধরে গিয়েছিল বলে একটু লিকার চা করতে kitchen এ গিয়ে দেখে প্রতিদিনের মতো বিড়ালটা ঢুকে বসে আছে। সে যেতেই পাস কাটিয়ে পালায়। খুব বিরক্ত লাগছিলো নিজের ওপর। কেন যে এসব ব্যাপারে জড়াতে গেল সে। কাজের মাসি আসতে এখন ঢের দেরি, আর একটু গড়িয়ে নেবে কিনা ভেবে বিছানায় শুল, মোবাইলটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে নাম্বারটা চেনা লাগল না।কে আবার এখন ফোন করলো ভাবতে-ভাবতে ফোনটা receive করলো। অপর পারে যিনি আছেন বেশ জোড়ালো আর শাসানের সুরে বলে, "আপনি কাজটা কিন্তু ভালো করছেন না মশাই, পুলিশকে আমাদের সম্বন্ধে জানানোর ফলটা ভালো হবে না কিন্তু..."

অমর তখন বলে, "আপনি কে? আমাকে সাবধান করার আগে আপনার পরিচয়টা আগে দিন।"

ও পাস থেকে আবার হুমকি এল, "দিলীপের বপারে আপনি একদম মাতব্বরি করবেন না।"

অমর পাল্টা হুমকি দিয়ে এপাস থেকে বলল, "আপনি বলবার কে? আপনার আস্পর্ধা হয় কি করে আমাকে শাসাবার!!" বলে ফোনটা কেটে দিল। নিজের উপর আবার বিরক্ত লাগল অমরের। এই সব ঝামেলায় না জড়ানোই ভাল ছিল। কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলা যায় না। একে অফিসের কাজে সময় হয় না, তার ওপর পুলিশের ঝামেলা। এখন যদি পুলিশকে এই ফোনের কথা বলা হয় তবে আবার কি না-জানি হবে। পুলিশ চলে যাওয়ার পরই ফোনটা এসেছে। এর অর্থ আমার বাড়ি পুলিশ ঢুকেছে ওরা সেটা লক্ষ্য করেছে। না: কারো পরামর্শ নেওয়া দরকার। মেজদার সাথে একবার যোগাযোগ করবে কিনা ভাবল। কিন্তু না মেজদা তো এখন ট্যুরে উওর বাংলায়, তবে অফিসে গিয়ে বলাইদা বা যদুনাথদার সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে; বরং সেটাই ভালো হবে। এই সব ভাবত-ভাবতে অমর বিছানায় মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে পড়ল। কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় দেখল মাথার কাছে যেন কে এসে দাঁড়িয় আছে, আবছা অবয়ব। মাথায় ঘোমটা টানা। হঠাৎ মোবাইলের রিংএর আওয়াজে। হাতটা পাশে রাখা মোবাইলের দিকে আপনা-আপনিই চলে যায়, "হ্যলো" বলতে-না বলতে ওপাশ থেকে মেজবৌদির গলা। অভিযোগের স্বরে বলল, 'অমর তুমি পুলিশকে আমাদের ফোন নং দিয়েছো? দিলীপের সাথে কারোরিই তো কোনও সম্পর্ক নেই, তুমি শুধু-শুধু কেন এসব কথা তুলে ঝামেলা পাকালে? তুমি তো জানো মেজদা এখন কলকাতায় নেই। তুমি পুলিশকে এখন এসব কথা বলে আমাদের ঝামেলাটা কেন বাড়ালে? এখন বাড়িতে যদি আসে আমি কি করবো? মেজদা নেই তুমি জেনেও আমাকে এই ঝামেলায় জড়ালে!!"

অমর তখন বলে, "ওরা আমার কাছ থেকে জোর করেই ফোন নং, ঠিকানা নিয়ে গেছে।" বৌদি শুনে ফোন ছেড়ে দিল। অমর আর না শুয়ে থেকে উঠে পড়ল বিছানা থেকে। মাসি আসার আগেই নিজের break-fast এর জন্য bread toster বার করে রুটি টোষ্ট করতে লাগলো। গ্যাসে দুটো ডিম boil করে break-fast টা সেরে নিলো। এসব কাজের মাসিই করে দেয়, আজ সে নিজেই করে নিল। break-fast করতে-করতেই অবশ্য মাসি এসে গেল। মাসি বলল, "দাদা তুমি এত তাড়াতাড়ি জলখাবার খাচ্ছ, বেরিয়ে যাবে নাকি?"

অমর শুধু "হুঁ..." করল। এসব কথা মাসিকে তো বলা যায় না। মাসি মাসির কাজ করতে লাগল। অমর এসে বিছানায় বসে কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগল। অফিসের কাগজগুলি গুছিয়ে রাখাই ভালো, এখন হাতে সময় আছে। মাসি চলে গেছে, দরজা খোলা। অমর হঠাৎ সচকিত হল দরজার ক্যাঁচ করে আওয়াজ শুনে। নাহ, এত উদাসীন হলে চলে না, তার মনে হল কেউ এসেছে। তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দেখে বিড়াল বাবাজি পা টিপে-টিপে দরজা ঠেলে ঢুকেছে। তাকে বাইরে তারিয়ে অমর দরজা লক করল। অমর ভাবল আমার এখন এত উদাসীন থাকা উচিত নয়। বিপদ যখন দোর গোঁড়ায়, সাবধান থাকাই বুদ্ধিমানের। সে একা থাকে। বিবাহ করার মনোবাসনা নেই। দাদা-দিদিরা অনেকবার ছোটভাইকে এ ব্যাপারে বলেছে, সে গা করেনি। ভালই আছে, ঝামেলা নেই। তাদের উল্টে বলেছে, তোমরা সংসার করে কত শান্তিতে আছ তা তো দেখতেই পাচ্ছি। আমাকে নাই বা জড়ালে...

বেলা নটা বাজার পর সে তৈরি হয়ে নিয়ে অফিসে বেরোয়। আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরলো। অফিসে ঢুকেই নিজের ব্যাগ রেখে বেয়ারাকে ডাকল। খোঁজ নিল, আগে বলাইদা এসেছেন কিনা। বেয়ারা 'না' বলল। অমর নিজের কাজে মন দেয়। বেয়ারাকে বলে রাখলো বলাইদা এলে তাকে জানাতে। বেয়ারা বলাইদা আসার পর তাকে খবর দিল। অমর তার কাগজপত্র গুছিয়ে বলাইদার ঘরে প্রবেশ করার পর বলাইদা বলে উঠলেন, "কি brother কি খবর বল।"

অমর বলল, 'খবর ভাল নয়।"

"কেন কি আবার হল?" বলাইদা বলে উঠলেন।

অমর ভোরের ঘটনা, তার সাথে ফোনের কথাটাও বলল। শুনে বলাইদার মুখে ভাঁজ দেখা গেল। বললেন, "দেখলে অমর, সেদিন যদি ওই ঘটনার সাথে না জড়াতে তোমার আজ এরকম হতো কি? যাক, যা হবার হয়ে গেছে। এটা জানবে যদিও জানি পুলিশে ছুলে আঠারো ঘা, তবু তোমায় এখন পুলিশেরই শরণাপন্ন হতে হবে। তুমি আগে পুলিশকে বলো তোমায় যে নম্বর থেকে ফোন করেছে, আর কি কি বলেছে; নাহলে পরে কিছু হলে পুলিশ তোমায় দোষ দেবে।"

অমর বলল, "ওটা একটা ল্যাণ্ড লাইন নম্বর। মনে হয় S.T.D.booth এর নম্বর..."

বলাইদা বললেন, "তাও পুলিশকে জানাও।"

অমর মোবাইল খুলে নাম্বারটা বার করল। বাঁ হাতের তালুতে নাম্বারটা টুকে নিল। তারপর পুলিশের দেওয়া নাম্বারে ফোন করল। পুলিশকে সকালের ফোনের কথা বলল তারপর ফোন নম্বরটাও দিল। পুলিশ তখন অমরকে বলল, "আপনি সাবধানে থাকবেন। আমরা আপনার বাড়ি observation এ রাখবার ব্যবস্থা করছি। কোন চিন্তা নেই।"

পুলিশকে ফোনে খবর দেওয়ার মিনিট পনেরো-কুড়ি বাদেই আবার একটা land line নম্বর থেকে অমরের ফোনে সেই সকালের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। শাসানির স্বরে বলল, "তোর মরণ বার বেড়েছে। তোর ডানা কিন্তু আমরাই ছাঁটবো, পুলিশ কিছু করতে পারবে না।"

অমরও তত তেজ দেখিয়ে বলল, "কে কার ডানা ছাঁটে দেখা যাবে।"

তখন অমরের মনে একটা প্রশ্নের উদয় হল, তার মনে হল যখনই সে পুলিশের সাথে কথা বলছে তার পরপরই হুমকি ফোন আসছে। কি কারণ? সে কথাটা আবার বলাইদাকে গিয়ে বলল। বলাইদা বললে, "বিরাট কিছু চক্রবাজি এর পেছনে কাজ করছে। কোন গোয়েন্দার সাহায্য নেওয়া গেলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়।"

অমরের তখন মনে পড়ল তার close বন্ধু সুদীপের অফিসের কলিগের বাড়িতে কোনও কিছু ঘটনার জন্য private detective কাজ করেছিল এবং তারা ব্যাপারটা solve ও করে। অমর তখন সুদীপের মোবাইলে ফোন করে। বলে, "তোর সাথে একটা জরুরী প্রয়োজন আছে।"

সুদীপ বলে, "বিকেলের দিকে Parkst changwa তে আয়। ঠিক ৫টা..."

#
বিকাল ৫টা। অমর Parkst .changwa resturent এ corner এর একটা টেবিল নিয়ে বেয়ারাকে স্যুপের order দিয়ে সুদীপকে call করতে ও বলল, "এসে গেছি।"

একটু বাদেই সুদীপ ঢুকল। সুদীপ বলল, "hii, what happened friend? কেন আমায় স্মরণ করেছ?"

অমর বলল, "বোস বলছি। তুই কি নিবি? soft drink না hard drink?"

"নাও boss তোমার অভিরুচি। এবার বল কি problem?"

অমর তখন সেই office tour থেকে আরম্ভ করে আজ অব্ধি যা-যা হয়ছে সবিস্তারে বলল। শুনে প্রথমেই সুদীপ যে কথাটা বলল, তা হল, "অমর তুই কিন্তু খুব ভুল করেছিস আমায় এখানে ডেকে এনে এই সব কথা বলে..."

অমর অবাক হয়ে সুদীপের মুখের দিকে চেয়ে রইল। সুদীপ আবার বলল, "এই হাটের মাঝে এসব কথা বলার স্থান নয়। বাড়িতে বসে একান্তে বলা দরকার ছিল, কারণ বোঝাই যাচ্ছে ওরা তোকে follow করছে। যাক এখন তুই আমায় কি করতে বলছিস?"

অমর বলল, "তোর কলিগের বাড়িতে যে গোয়েন্দা লগানো হয়েছিল তার সাথে যদি যোগাযোগ করে দিস তবে আমি তাকে এ বপারে investigation করাতে চাই।"

সুদীপ বলল, "দাঁড়া-দাঁড়া তুই কেন investigation করবি?এটা তো পুলিশের ব্যাপার। তুই পুলিশের সাহায্য নে।"

অমর বলল, "সুদীপ এই লোকেদের সাথে পুলিশের কিন্তু যোগাযোগ আছে। না থাকলে আমি পুলিশের সাথে কথা বলার পরই ওদের হুমকির ফোনটা আসছে।"

সুদীপ তখন ব্যাপারটা বুঝল। সে বলল, "আমায় তাহলে অনিন্দর সাথে যোগাযোগ করতে হয়।"

বেয়ারা ততক্ষণে অমরের order দেয়া খাবার serve করে গেছে। ওরা দু'জনে খেতে-খেতে আলোচনা করতে লাগলো। সুদীপ বলল, 'অমর খাওয়া হলে তোর বাড়ি চ। সেখানে বসে অনিন্দর সাথে যোগাযোগ করব।"

অমর বলল, "তাই 'চ।"

বাড়ির মেন গেটে পৌঁছে ঢুকতে যাবে, মনে হল পাঁচিলের পাশ থেকে কে যেন চকিত নিজেকে সরিয়ে নিল। অমর সচকিত হয়ে পাঁচিলের ধারে দ্রুত দৌড়নোর মতই ছুটে গেল। গলির মোড়ের দিকে দ্রুত ছুটে যেতে একজনকে দেখল। মুখটা দেখা গেল না। সুদীপ তটস্থ হয়ে জিজ্ঞাস করল, "কি হল অমর?"

অমর বলল, "ধরতে পারলাম না পালিয়েছে। সুদীপ আমাকে গোয়েন্দার সাথে যোগাযোগ করতেই হবে। আয় ভিতরে আয়।"

অমর, সুদীপ ভিতরে গেল। অমর নিজে ফ্রিজ থেকে একটা বোতল নিল, সুদীকেও দিল। জল খেয়ে সুদীপ তাড়াতাড়ি অনিন্দর সাথে যোগাযোগ করল। অনিন্দ সুদীপের ফোন পেয়ে এবং সব শুনে বলল, "আমার বাড়ি চলে আয়। আমি তোদের এখনই তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। সে private detective। ভাল কাজ করে, নামও করেছে।"

তখন ঘড়িতে রাত ৮টা। সুদীপ বলল, "অমর এখন যাবি, না কাল যাবি?"

অমর বলল, "এখনই 'চ'। কাল আর হবে না। কাজ আছে।"
( চলবে )


All Bengali Stories    162    163    164    165    (166)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717