Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়: এক অদম্য সাহসী নারীর গল্প

Bangla Article

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



All Bangla Articles    1    ( 2 )     3     4     5    

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়: এক অদম্য সাহসী নারীর গল্প
Bangla Article
লেখক - শিলাজিৎ কর ভৌমিক, ধলেশ্বর, আগরতলা
Date: 03-10-2021


kadambini-ganguly
## কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়: এক অদম্য সাহসী নারীর গল্প

তখনকার রক্ষণশীল সমাজ। মেয়েদের শিক্ষাদান করা যেন পাপ। আবার সেই মেয়ে ডাক্তার হবে? হলে, নরকেও ঠাঁই পাবে না সেই মেয়েটি ও তার পরিবার। এসব দুরবস্থা দেখে কবি হেমচন্দ্র ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন, "হায় হায়, ঐ যায় বাঙালির মেয়ে।"

কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও হাল ছাড়তে নারাজ বিহারের ভাগলপুরের নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্রজকিশোর বসুর কন্যা কাদম্বিনী দেবী। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা তাঁর অদম্য।

১৮৮৩ সালে কাদম্বিনী দেবী তাঁর সহপাঠী চন্দ্রমুখী বসুর সঙ্গে বেথুন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। এবং বলা বাহুল্য, তাঁরা দুজনেই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা বি.এ পাশ।

বি.এ পাশ করে কাদম্বিনী দেবী ডাক্তারি পড়ার জন্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে আবেদন করেন। তবে সে সময় স্ত্রী-শিক্ষা বিরোধীরা কাদম্বিনী দেবীর জন্যে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছিল। আবার ইংরেজদের মধ্যে কিছু ভালো মানুষ সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেন। যেমন, শিক্ষা অধিকর্তা আলফ্রেড ক্রফট ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ কোটস; কলেজ কাউন্সিলের নিকট লিখিত আবেদন রাখেন, "মহিলাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান শেখা প্রয়োজন। যদি একদল মহিলা চিকিৎসক অন্তঃপুরে ঢোকার অধিকার পায় তাহলে সেখানকার দুঃখ-কষ্ট অনেকটা দূর হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেশীয় ও অন্যান্য মহিলাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার (এল.এম.এস) সুযোগ দেওয়া উচিত।"

শিক্ষা অধিকর্তা ক্রফট ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কোটস-এর এই প্রচেষ্টায় কাদম্বিনী দেবী ১৮৮৪ সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সমস্যার কি শেষ হল? না! মেডিকেল কলেজে স্ত্রী-শিক্ষা বিরোধী অনেক অধ্যাপকরাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ফলত, ১৮৮৮ সালে কলেজের শেষ পরীক্ষায় অন্য সব বিষয়ে কৃতকার্য হয়েও মেডিসিনের মৌখিক পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক কাদম্বিনী দেবীকে এক নম্বর কম দিয়ে ফেল করিয়ে দেয়। যার ফলে মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি সুযোগ্য কাদম্বিনী দেবী পেলেন না।

ডাঃ কোটস সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকের উপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন। তিনিই কাদম্বিনী দেবীকে গ্রাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ ডিগ্রি প্রদান করেন এবং সেই অসম্ভব মেধাবী ছাত্রীকে চিকিৎসা-জগতে প্রবেশাধিকার দেন।

১৮৯২ সালে কাদম্বিনী দেবীর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের আন্তরিক সহযোগিতায় ইংল্যান্ডে যান চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার জন্য। বিলেত থেকে ফিরে এসে বেশ কিছুদিন তিনি লেডি ডাফরিন হাসপাতালে যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তারপর স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করা শুরু করেছিলেন। এই সময়ে তিনি দরিদ্র রোগীদের বাড়িতে নিজে যেতেন এবং প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে দেখতেন আর তাও বিনা পয়সায়।

এতকিছুর পরেও মহিলা চিকিৎসক হওয়ার জন্যে প্রতিকূলতা ও সমস্যা তাঁকে ছাড়েনি। পথেঘাটে তাঁকে দাই বলে নারী-বিদ্বেষীরা অপমান করে বেড়াত। অন্যদিকে, সেকালের একটি দৈনিক পত্রিকা 'বঙ্গবাসী'-র সম্পাদক মহেন্দ্র পাল তাঁকে ব্রাম্মসমাজের এক জঘন্য নিদর্শন ও প্রতিভা বলে আখ্যা দেয়। তাঁর স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হলেন এবং মহেন্দ্র পালের বিরুদ্ধে অবমাননার মামলা করলেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মহেন্দ্র পালের একশত টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের জেল হয়।

এখানেই শেষ নয়, একবার কাদম্বিনী দেবী এক বাড়িতে গিয়েছিলেন এক প্রসূতি মায়ের প্রসব সংক্রান্ত কাজে। গিয়ে দেখেন শিশু ও মা দুজনেই মৃত্যুর কাছাকাছি। বাঁচানোর খুব একটা আশা ছিল না। ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী দেবী আপ্রাণ চেষ্টা করে তাঁর চিকিৎসা নৈপুণ্যর দ্বারা শিশু ও মা দুজনকেই বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু এসবের পরিবর্তে তিনি পেলেন চরম অপমান। সেই বাড়ির কর্ত্রীর ব্যবস্থাপনায় ডাঃ কাদম্বিনী দেবীকে খেতে দেওয়া হল বাড়ির প্রবেশ দ্বারের বারান্দায়। কিছুক্ষণ পরে বাড়ির ভেতর থেকে আদেশ এল, "ওদেরকে (ডাঃ কাদম্বিনী দেবী এবং তাঁর সহকারিণীকে) বলো – এঁটো কলাপাতা যেন বাইরের বাগানে ফেলে দেয়। বাড়ির কোনো চাকর-বাকর ঐ এঁটো কলাপাতা ছোঁবে না।"

ডাঃ কাদম্বিনী দেবী মুখ বুজে এসব অপমান সহ্য করলেন। তবে কি ছিল তাঁর অপরাধ? শুধু এটাই, তিনি ছিলেন একজন মহিলা চিকিৎসক।

দিনটি ছিল ৩রা অক্টোবর, ১৯২৩ সাল। সেদিন তিনি এক জটিল অস্ত্রোপচার করে সফল হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। সেদিন তিনি তাঁর পুত্রবধূকে বলেছিলেন, "লোকে বলে ডাঃ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় নাকি বৃদ্ধ হয়ে আর আগের মতো অস্ত্রোপচার করতে পারেন না! আজকের ঘটনা কেউ যদি দেখত, এমন মন্তব্য করার সাহস পেত না।" এরপর তিনি স্নান করতে গিয়ে স্ট্রোক করে মারা যান। সেদিন তিনি অস্ত্রোপচার করে ৫০ টাকা পান। সেই টাকাই খরচ হল তাঁর শেষকৃত্যে। সারাজীবন মানুষের সেবা করার পরিবর্তে তিনি বেশীর ভাগ সময় অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করলেন। জীবনের এই কঠিন পর্ব তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হল।

তিনি সারাজীবন মানবিকতা, সেবা ও সহনশীলতার দিয়ে কাজের মাঝে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি শুধু একজন মহিলা চিকিৎসকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী নারী ও ভারতের এক আদর্শ আধুনিক মহিলা। তিনি দেহত্যাগ করলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি মহা-সংগ্রাম ও সেবার যে ঐতিহ্য রেখে গেলেন সেটাকে তাঁর নিজের চিতার আগুনও ভস্মে পরিণত করতে পারেনি।
( সমাপ্ত )

তথ্যসূত্র:
বিজ্ঞান সাধনায় বাঙালি ও অন্যান্য – রেখা দাঁ
Kadambini Ganguly: The Archetypal Woman of Nineteenth Century Bengal – Mousumi Bandopadhyay


Next Bangla Article

All Bangla Articles    1    ( 2 )     3     4     5    

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717