মাণিক্য
( বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
- হরপ্রসাদ সরকার, আগরতলা, ত্রিপুরা
০৭-১০-২০১৭
Previous Parts:
1st Part
2nd Part
3rd Part
◕ মাণিক্য
৪র্থ পর্ব
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------
চারটা বাজতেই ঘড়িতে এলার্ম বেজে উঠল। ধর-মরিয়ে উঠে বসল সাধু। চোখ কচলাতে কচলাতে সে দেখল রাজ অনেক আগেই উঠে গেছে। ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। মনে হচ্ছে কারোর সম্পর্কে ইনফরমেশন নিচ্ছে।
সাধুকে উঠতে দেখে রাজ পিছন ফিরে বলল, "তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও এখুনি বেড়িয়ে পড়তে হবে।"
বিছানা ছেড়ে ঝটপট লাফিয়ে পড়ল সাধু। হাত মুখ ধুয়ে বেশ তাড়াতাড়িই তৈরী হয়ে গেল। রাজ আগেই তৈরী ছিল। চারটা পঁয়ত্রিশে ওরা পৌঁছে গেল রণধীরবাবু বাড়িতে।
দেখল কাজের মেয়ে 'বিন্দু' অনেক আগেই এসে গেছে। দুর থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বিন্দুর দিকে তাকাল রাজবংশী। তারপর মনে মনেই হেসে উঠল।
বিন্দুকে দেখলেই মনে হয় একেবারে সাদা সিদা। জামা-কাপড় দেখেই বুঝা যায় বেশ গরীব। ও যে নিজের নামটাও যে লিখতে জানে না তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না।
রণধীরবাবু এগিয়ে এসে রাজবংশী আর সাধুকে ওনার বেডরুমে নিয়ে গেলেন। বিন্দুকেও ভিতরে ডাকা হল।
বাবুর বেডরুমে দুজন নতুন অতিথিকে দেখে সে বেশ অবাক হল। সজলাদেবী বললেন, "যাও বিন্দু চার কাপ চা করে নিয়ে আসো। তুমি আর হারু যদি চা খাতে চাও তবে তোমাদের জন্যও বানিয়ে নিও।"
বিন্দু চলে যেতেই রাজবংশী বলল, "রণধীরবাবু, আপনাদের প্রতিদিন যে সাহিত্য সভা হয়, সেই সভায় কে কে এলো কিংবা কে কে এলো না, তার কী কোন রেজিস্টার থাকে?"
রণধীরবাবু একটু ভেবে বললেন, "না সে রকম কোন খাতা পত্র তো নেই। আসলে আমরা তো সবাই এই সাহিত্য সভাতে জড়ো হই মনের খোরাক পেতে। সেখানে এই সবের দরকার কখনো মনেই হয়নি।"
রাজবংশী আবার প্রশ্ন করল, "ধরুন, আমি আপনাদের সাহিত্য সভার মেম্বার হতে চাই। তবে আমাকে কী কী করতে হবে?"
রণধীরবাবু একটু হেসে বললেন, "দেখো তুমি যদি আমাদের সাহিত্য সভাতে ভর্তি হতে চাও তবে তোমাকে আমাদেরই কোন এক সদস্যের পরিচয়ে আসতে হবে। একটা ফর্ম আছে, সেটাতে নিজের নাম ধাম ইত্যাদি কিছু বিষয়
লিখে দিতে হবে। এই ফর্মটি জমা দেবার সময় এক কালীন দুই হাজার টাকা জমা দিতে হবে। আর প্রতি মাসে সদস্যপদের চাঁদা পাঁচশ টাকা। সব টাকাই আমাদের সংস্থার নামে ব্যাঙ্কের খাতায় জমা পড়বে।"
-"কে কে সেই টাকা ব্যাঙ্কের খাতা থেকে তুলতে পারেন?"
-"আছেন। আমাদের মধ্যে তিন-চারজন আছেন যারা এই টাকার হিসাব নিকাশ রাখেন। প্রতি মাসের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় রবিবারে এর হিসাব নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করা হয়। এখন পর্যন্ত তো এক পয়সাও এদিক সেদিক হয়নি।"
-"এত গুলি টাকা নিয়ে আপনারা কী করেন?"
-"অনেক কাজ করি মশায়। প্রত্যেক পূজায় আমরা রাজ্যের প্রচুর বৃদ্ধাশ্রমে জামা কাপড়, ঔষধ-পত্র বিলি করি। আমরাও তো তাদেরই মত বৃদ্ধ, তাই হয়তো তাদের কষ্টটা আমরাদের নিজের কষ্ট বলেই মনে হয়।"
-"শুধু কী পূজাতেই এ সব বিলি করা হয়? নাকি অন্য সময়ও এ রকম সেবা কার্য হয়ে থাকে।"
-"পূজোর সময় এমনটা হয়ই হয়। তাছাড়াও সারা বছর ধরেই বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে আমাদের কিছু না কিছু সেবাকার্য লেগেই আছে।"
-"আপনাদের এই সেবা মূলক কাজের কথা শুনে খুব ভাল লাগল, রণধীরবাবু। আমি শ্রদ্ধা ভরে, নত মস্তকে প্রবীণ সঙ্গমকে আমার সম্মান জানাই।
আচ্ছা, আপনার কথা শুনে মনে হল রোজকার রেকর্ড না রাখলেও, কে কবে এই সংস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে- কার হাত ধরে যুক্ত হয়েছে - সেই সব রেকর্ড নিশ্চয়ই রাখা হয়।"
-"হ্যাঁ, আপনি একদম ঠিক বলছেন। সেই রেকর্ড আমাদের কাছে আছে।"
-"সেটা কী আমি একটু দেখতে পারি?"
-"নিশ্চয়ই। তবে এখন তো ওগুলি আমার কাছে নেই। মিঃ দত্তের কাছ থেকে আনিয়ে দিতে হবে। এক কাজ করি, আজকেই আমি সেই রেজিস্টারটি আনিয়ে রাখি, কাল আপনি দেখে নেবেন।"
-"ঠিক আছে, সেইই ভাল। এখুনি কী ফোন করে ওটা চাওয়া যেতে পারে?"
রণধীরবাবু বুঝলেন নিশ্চয়ই কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে। তাই রাজবংশী এত তাড়া দিচ্ছে। ফলে তিনি সময় নষ্ট না করে বললেন, "দাঁড়ান আমি এখুনি মিঃ কেশব দত্তকে ফোন করছি।"
এই বলে তিনি ফোনটি হাতে নিয়ে মিঃ দত্তকে ফোন করলেন। এমন সময় ঘরে চা নিয়ে ঢুকল বিন্দু। বিন্দুর পেছন পেছন এসে হাজির হল হারুও।
রণধীরবাবু ফোনটা নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেলেন। সবার সামনে আর সব কথা বলতে চাইলেন না। ফোনে কথা শেষ করে একটু পরে তিনি আবার ঘরে ফিরে এলেন।
রাজবংশীকে বললেন, "বুঝলেন মশায়, মিঃ দত্তের সাথে কথা হয়েছে। মিঃ দত্ত বললেন সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটা নাগাদ উনার ড্রাইভার রেজিস্টারটি নিয়ে আসবে।"
রণধীরবাবুর কথা শেষ হতেই হারু মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,"আজ্ঞে। আমি কাল আর পরশু আসবো না স্যার।"
এই কথা শুনে হঠাৎ ধপ করে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন রণধীরবাবু। প্রচণ্ড ধমকের সুরে বললেন "কেন?"
রণধীরবাবু যে হঠাৎ এমন তেলে বেগুনে চটে যাবেন তার জন্য তৈরী ছিল না ঘরের কেহই। তাই উনার প্রচণ্ড ধমকে সবাই যেন ছেবরা খেয়ে উঠল। হারুও ছেবরা খেয়ে উঠল। সে পাথরের মত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
দাঁত কটমট করতে করতে রণধীরবাবু বলতে লাগলেন, "কেন ছুটি চাই তোমার? কাণ্ডজ্ঞান কিছু আছে তোমার? ঠিক আছে যাও। পরে তোমার সাথে কথা হবে।"
বকা খেয়েও ছুটি পেয়ে খুশি খুশি মনে বেরিয়ে গেল হারু। হারু বেরিয়ে যেতেই রণধীরবাবু একটু শান্ত হয়ে বললেন, "সরি, আমি হয়তো একটু বেশীই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। আসলে এই দুশ্চিন্তার সময়ে
নিজের মাথাটি ঠিক রাখতে পারলাম না। এখন আমার সবচেয়ে বেশী দরকার ঐ গাড়িটি। আর ওর কিনা এই সময়েই ছুটি চাই। মানুষের কিছু কাণ্ডজ্ঞান থাকা দরকার।" এই বলে তিনি হাতে একটি চায়ের কাপ তুলে নিলেন আর
বাকিদেরও চায়ের কাপ তুলে নিতে ইশারা করলেন। সবাই হাতাহাতি চা তুলে নিল। বিন্দু ঘরের বাইরে একটু আড়ালেই দাঁড়িয়ে রইল। সে চা-টা কিছুই নিল না।
সবার চা খাওয়া হয়ে গেলে, বাসন কুশন ধুয়েই বিন্দুর ছুটি। কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিল না, কেন তাকে আজ অসময়ে ডেকে আনা হল?
চা খেতে খেতেই বিন্দুকে ভেতরে ডাকল সজলাদেবী। বিন্দু ঘরে এলে প্রথম প্রশ্নটা করল রাজবংশী। বলল, "তুমি কী ধন্যমাণিক্যকে চিন?"
এমন প্রশ্নে বিন্দু যেন থ খেয়ে গেল। জবাব খুঁজতে খুঁজতে ওর অবস্থা তো কাহিল। সে বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "আপনি কী আমাদের ধনকাকুর কথা বলছেন?"
-"না! ধনকাকু নয়। ওনাকে তো সবাই ধন্যমাণিক্য বলেই ডাকে। তুমি কী চিন?"
আবার একটু আকাশ পাতাল ভেবে বিন্দু বলল, "না! এমন নাম তো কখনো শুনিনি। আমাদের পাড়ায় থাকলেও থাকতে পারে। তবে সে আমি জানি না।"
বিন্দুর এমন সহজ সরল কথা শুনে প্রাণ খুলে হেসে উঠল ঘরের সবাই। রাজবংশী বলল, "আচ্ছা। ঠিক আছে। ও কথা থাক, পরের কথায় আসছি। তুমি কী জান, এ বাড়ি থেকে গতকালকে দুটি রূপার দামি জিনিস চুরি গেছে।"
রূপার জিনিস চুরি গেছে শুনেই বিন্দুর মুখ চোখ একদম শুকিয়ে গেল। হাসি হাসি কাঠ-কাঠ চেহারাটা হঠাৎ যেন আকাশ থেকে পড়ে শত খণ্ড হয়ে গেল। ভয়ে সে থর থর করে কাঁপতে লাগল।
কথা বলবে কী, তার কাঁপ-কাঁপিই তো থামছে না। অগত্যা বাধ্য হয়েই সাধু তাড়াতাড়ি উঠে একটি ছোট টুল এগিয়ে দিল। বলল, "আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন? আমরা তো মোটেই পুলিশের লোক নই।
তবে এ বাড়ি থেকে কিছু অতি দামী জিনিস চুরি গেছে তো। তাই আপনাকে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হল। আপনি যা জানেন, তাই বলবেন।" কিন্তু না, কোন লাভ হল না। বিন্দুর ভীতি আর কাটল না।
চুরি নাম শুনেই যে এমন ভাবে কাঁপতে থাকে, তার দ্বারা যে চুরি মোটেই সম্ভব নয় তা আর বুঝার বাকি রইল না কারোর। হাতে একটি একশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে ওকে বিদেয় করলেন রণধীরবাবু।
বিন্দু চলে যেতেই নতুন প্রসঙ্গ তুলল রাজবংশী। বলল, "কিছু খারাপ ভাববেন না, আপনি ঐ সময় হারু উপর এমন ভাবে চটে গেলেন কেন?"
এবার বেশ খোলা মনে হেসে ফেললেন রণধীরবাবু। হাসতে হাসতে বললেন, "আর বলবেন না, গত পনের দিনে অন্তত চার বার ছুটি চেয়েছ সে। আজ নিয়ে পঞ্চম বার।
কীসের এত ছুটি দরকার তাও বলে না। জিজ্ঞেস করলে মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।। ওদিকে তার বউ আমাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সে নাকি গত দুই তিন মাস যাবত বাড়িতে কোন টাকা পাঠাচ্ছে না!
শুনলাম ওর কী এক বন্ধু এসেছে বিদেশ থেকে। এর পর থেকেই বুঝি এর মাথাটা বিগড়ে গেছে। আজ কাল মাঝে মাঝে একটু মিছে কথাও বলছে সে। এই যেমন সেদিন আমাকে নিয়ে মোটরস্ট্যান্ডে গেল।
বলল, খারাপ স্টেপনিটা ঠিক করতে দিতে হবে। তাই মোটরস্ট্যান্ডে গিয়ে স্টেপনিটা দিয়ে এল। আজ দেখলাম, আসলে সেইদিন স্টেপনিটা সে দেয়ই নি। সেটা গাড়ির পিছনে যেই কী সেই পড়ে আছে। যেই লোহাটা ঢুকে সেই
স্টেপনিটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল সেটি টায়ারর গায়ে যেই কী সেই লেগে আছে।
এই কথা শুনে অতি ব্যস্ত হয়ে রাজবংশী ঝটপট বলল, "আচ্ছা বলুন তো, আজকে সকালে যে পথে আমরা ডঃ কালীপ্রসন্ন স্যার বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং ফিরে এসেছিলাম
সেদিনও কী একই পথে আসা যাওয়া করেছিলেন? সেদিনের পথটা আর আজকের পথটা কী একই ছিল? একটু ভেবে বলুন। ধীর সুস্থির ভাবে ভেবে বলুন।"
একটু গভীর ভাবে ভেবে রণধীরবাবু বললেন, "হ্যাঁ, সেদিনের পথ আর আজকের পথটা একই ছিল। একই পথ ধরে আমরা গিয়েছিলাম আর ফিরে এসেছিলাম।"
-"আর ইউ শিওর?"
-"হ্যাঁ, আমি একদম শিওর।"
-"তবে স্টেপনিটা দিতে মোটরস্ট্যান্ড গেলেন কবে?"
-"ঐ দিনই তো আসার পথে -! আরে হ্যাঁ, ঐ দিন তো আসার পথে আমরা মোটরস্ট্যান্ড গিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে তো আসার সময় আর মোটরস্ট্যান্ড যায়নি!"
হঠাৎ ধাম করে সোফা ছেড়ে প্রায় লাফিয়ে উঠে রাজবংশী বলল, "আর দেরী নয় রণধীরবাবু। চলুন এখুনি আপনার গাড়িটি নিয়ে বেরুতে হবে। আমিই ড্রাইভ করব। সময় নষ্ট করা একদম চলবে না। তা না হলে আসামী পালাবে?
আমি জানি আসামী কোথায় আছে?" এই বলে সে মোবাইলে কাকে ফোন করতে করতে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কী হচ্ছে, কিছুই ভেবে পেল না কেউ। শুধু রাজবংশীর কথা মত এই ভর সন্ধ্যায় ওরা তিনজন ঝটপট গাড়িতে গিয়ে উঠল আর অতি দ্রুত বেরিয়ে গেল। সোজা মোটরস্ট্যান্ড।
রাজবংশী ধীরে বলল, "রণধীরবাবু! সেদিন কোন্ দোকানটির সামনে আপনারা দাঁড়িয়েছিলেন?" রণধীরবাবুর কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু আর বলার দরকার হল না, তার আগেই সবাই দেখতে পেল ঐ দূরে একটি
মোটর মেকানিকের দোকানের সামনে একটি টেবিলে হারু বসে আছে। পাশের একটি ছেলের সাথে সে কথা বলছে। ছেলেটির বয়স হারুর মতই হবে। ছেলেটির সারা শরীরে রং - কালি লেগে আছে।
সে একটি গাড়ির চাকা মেরামত করছে আর হাসতে হাসতে হারুর সাথে কথা বলছে।
অল্পক্ষণের মধ্যেই একটি পুলিশের গাড়ি তাদের পাশে এসে থামল। অবাক বিস্ময়ে রণধীরবাবু দেখলেন, "আরে! এ যে হরিকৃপণ!" উনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কি রাজবংশী উনাকে থামিয়ে দিল।
সে হরিবাবুকে চোখের ইশারায় অপরাধীদের দেখিয়ে দিল। ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে এল ছয় জন পুলিশ আর ওরা অতি স্বাভাবিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। রাজবংশীর পিছু পিছু গাড়ি থেকে নামতে গেলেন রণধীরবাবু ও সাধু।
রাজবংশী বাধা দিয়ে বলল, "আপনারা এখানেই বসে থাকুন। ওখানে বিপদ আছে। এখান থেকেই আপনারা সব দেখতে পাবেন।"
দারোগা আর রাজবংশী অতি স্বাভাবিক ভাবে পাশাপাশি হাঁটতে লাগল সেই দোকানটির দিকে। হারু এবং সেই ছেলেটি নিজেদের কথার মধ্যে এতই ব্যস্ত ছিল যে, বাইরে এত কিছু যে ঘটে চলছে তা লক্ষ্যই করল না।
ততক্ষণে হরিবাবু ও রাজবংশী পৌঁছে গেছে দোকানের এক পাশে। পিছন থেকে হারুর পিঠে সন্তর্পণে হাত রেখে দারোগাবাবু বললেন, "এখানে কী করছেন হারুবাবু?"
এই কথা শুনে চমকে উঠল হারু। পেছন ফিরে দেখল পুলিশ, পাশেই রাজবংশী। এটা স্বপ্ন না বাস্তব, সে বুঝে উঠতে পারছে না। রাজবংশী একটু মুচকি হেসে বলল, "এই হিরো, এখানে কী করছ তুমি?"
কাঁপা কাঁপা ভাঙা স্বরে হারু বলল, "কথা, না -মানে, এখানে বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছি। কথা বলছি। ঐ তো আমার বন্ধু।"
ওর কথা শেষ হতে না হতেই ওর বন্ধুটি পুলিশকে দেখে, নিজের হাতের লোহা-লক্কড়গুলি হরিবাবু আর রাজবংশীর উপর তীব্র ভাবে ছুড়ে মেরে, উল্টো দিকে মারল দৌড়।
এই রেঞ্জ, প্লাস, ডালিগুলি মাথায় এসে লাগলে আর রক্ষা ছিল না। অতি কষ্টে নিজেদের সামলে নিল রাজবংশী আর দারোগাবাবু। এই কাণ্ডে ক্ষণিকের মধ্যেই হৈ-চৈ পড়ে গেল।
কিন্তু সেই ছেলেটি পালিয়ে যাবে কোথায়? বাকী পুলিশগুলি তো ততক্ষণে তৈরীই ছিল।
ওরা বাঘের মত ঝাপটে ধরল হারুর বন্ধুটিকে। পালানোর আর কোন রাস্তাই রইল না। এই হৈ-চৈ এ প্রচুর লোক জড়ো হয়ে গেল রাস্তার দুপাশে। হারু আর ওর বন্ধুটির কলারে ধরে টেনে হেঁচড়ে উঠানো হল পুলিশের ভ্যানে।
সেখান থেকে সোজা থানায়।
এত সব কাণ্ড দেখে রণধীরবাবু তো আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি রাজবংশীকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলেন, রাজবংশী হাত তুলে উনাকে থামিয়ে দিল। বলল, "এখন বাড়ি চলুন। বাকি কথা পরে হবে।"
কেউ আর কোন রা-মাত করল না। ওরা ফিরে এল রণধীর ভবনে। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। প্রবীণ সঙ্গমের সদস্যদের সেই রেজিস্টারটি অনেক আগেই দিয়ে গিয়েছে মিঃ কেশব দত্তের ড্রাইভার।
হোক রাত সাড়ে দশটা। কিন্তু সেই রেজিস্টারটি না দেখে আর বাড়ি ফিরতে চাইল না রাজবংশী। কিছুক্ষণ রেজিস্টারটি সে উল্টে পাল্টে দেখল। তারপর হঠাৎ হা-হা-হা খুব হেসে উঠল। কী কারণে কে জানে?
শুধু বলল,"আপনার মুদ্রার চোর ধরা পড়েছে রণধীরবাবু। আশা করি কাল সকালের মধ্যে মুদ্রাগুলিও পাওয়া যাবে। তবে আজ চলি। সব কিছু কালকে খুলে বলব।
কালকেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি সকাল দশটায়, না না দশটায় নয় বেলা বারটা নাগাদ আসবো। সকালে সাধুদার একটু কাজ আছে। কাজটি শেষ করেই আমারা চলে আসব। হরিবাবুও ঐ সময়েই আসবেন।
কিচ্ছু ভাববেন না। আজ আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। চোর যখন ধরা পড়ে গেছে, আশা করি মুদ্রাগুলি আর ফিরে পেতেও কোন অসুবিধা হবে না।"
একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রণধীরবাবু বললেন, "ঠিক আছে , দেখা যাক কাল কী হয়।" রণধীরবাবুর চোখে বারে বারে ভেসে আসতে লাগল কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলি।
রণধীরবাবুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াল রাজবংশী আর সাধু।
Click here to read the next part
Next Part
Previous Parts:
1st Part
2nd Part
3rd Part
All Bengali Stories
22
23
24
25
26
27
28
29
(30)
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717