-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
All Bengali Stories
146
147
148
149
150
(151)
152
153
◕
বিশ্বাস
লেখক - প্রশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়
##
বিশ্বাস
লেখক - প্রশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়
#
বছর চল্লিশের চাকরি জীবনটা বাইরে কাটিয়ে ক'দিন আগেই অকৃতদার স্বপন মিশ্র স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছেন। বিশাল পৈতৃক বাড়িটা এখন একদম ফাঁকা। এখানে বদলে গেছে প্রায় সবকিছুই। আশপাশের প্রায় সব কটা বাড়িই এখন আবাসনের রূপ নিয়েছে। পুরানো প্রতিবেশীরা অনেকেই এখন আর এখানে থাকেন না, আর কেউ-বা নিজের বাড়ি প্রোমোটারের হাতে তুলে দিয়ে আবাসনের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছেন। একমাত্র পাশের বাড়ির আসলম খান সাহেবের সাথেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে এখনও বেশ গল্প করা যায়। কিন্তু তা আর ক'বার, কতক্ষণ!
বাড়ির ভিতর এদিক-ওদিক ঘুরতে-ঘুরতে বাবা-মা'র অনুপস্থিতিটা মাঝে-মধ্যেই কেমন যেন স্মৃতির সাগরের ঢেউয়ের মত উঠে এসে টুকরো-টুকরো খুশীর বুদবুদ ছড়িয়ে আবার মিলিয়ে যায় অসীম অতীতের গহনে। আর ছাদে গেলে মনে পড়ে লোরার কথা। ওরা যে ওদের বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে কোথায় চলে গেছে, কেউ আর সে খবর রাখেনি। এমন কি ওদের বাড়ির ক্রেতা এই আসলম খান সাহেবও ওদের কোনও হদিস দিতে পারেন না।
চাকরির ডাকের চিঠি দেরি করে হাতে আসায় রওনা দেবার আগে মাত্র দুই দিনই সময় পেয়েছিলেন স্বপন। নেহাত লোরার মত একজন গোছানে মেয়ে ছিল... কি কি জিনিস স্বপনকে নিয়ে রওনা হতে হবে তার একটা লিস্ট ও নিজেই বানিয়ে এনেছিল। তারপর একটা-একটা করে জিনিস ঐ লিস্ট দেখেই স্বপনের মা তাঁর সুটকেসে ভরে দিয়েছিলেন। আর কেউ না বুঝলেও স্বপনের মা বোধ হয় সেদিন কিছু একটা বুঝে ফেলেছিলেন। তাই বেরোবার আগে চুপিচুপি তাঁকে ডেকে বলে দিয়েছিলেন, "খোকা, লোরাকে কিছু লেখার থাকলে আমার চিঠির লেফাফাতেই পিন করে ওর নাম লিখে পাঠিয়ে দিস। আমি ওকে ডেকে দিয়ে দেব।"
প্রথম-প্রথম মা'র চিঠির লেফাফার মধ্যেই লোরার লেখা একটা পাতা থাকত। তারপর এক সময় তা বন্ধ হয়ে গেল। মা জানিয়ে ছিলেন, "লোরারা বাড়ি বিক্রি করে কোথাও দূরে চলে গেছে। যাবার সময় তাঁদের, এমন কি আসলম খান সাহেবকেও নতুন ঠিকানাটি দিয়ে যায়নি।"
চিঠির অক্ষরগুলোর অন্তরালে মা'র হতাশার আভাস অনুভব করতে পেরে স্বপন আর কথা বাড়ান নি। আস্তে-আস্তে তাঁর স্মৃতির গহন অন্ধকারে হারিয়ে গেল লোরা। লোরা হারিয়ে গেলেও স্বপনবাবুর অজান্তেই তার নীরব স্মৃতিগুলো রয়ে গেল তাঁর অবচেতন মনের একটি গোপন কোটরে।
#
হাতের আঙুলের আলতো ছোঁয়া দিয়ে নিজের পুরানো দেরাজটির ওপরের ধুলোয় আঁক কাটছিলেন আনমনা স্বপন। তাঁর বাল্যকালের সমস্ত সংগৃহীত সম্পদই এই দেরাজে জমা হয়ে আছে। এটা-সেটা ভাবতে-ভাবতে হঠাৎই একটা কথা তাঁর মনে পড়ে গেল, তিনি বাড়ি থেকে যাবার সময় এই দেরাজের চাবিটা তাঁর মা'র হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে তাঁর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্রগুলো, তাঁর মা ঠেসে-গেদে এই দেরাজেই ঢুকিয়ে দিতেন। প্রতিবারই ছুটিতে বাড়ি আসলে মা তাঁকে দেরাজটা খুলে সাফ-সাফাই করতে বলতেন, কিন্তু কোনবারই তা আর হয়ে ওঠেনি। মা মারা যাবার আগে, শেষ চিঠিতে জানিয়েছিলেন যে, তিনি দেরাজটিরই তলায় একটা খাঁজে তার চাবিটা ঢুকিয়ে রেখেছেন।
চাবিটা বের করে স্বপনবাবু দেরাজটা খুলে ফেললেন। প্রথম পাল্লাটা টানতেই একটা লেফাফা তাঁর পায়ের কাছে এসে পড়ল। খুব অবাক হয়ে তিনি লেফাফাটি তুলে নিলেন। অস্পষ্ট পোস্ট অফিসের ছাপে যা দেখা গেল – এটি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরের পুরানো। আশ্চর্য, এটার কথা মা তো কখনও তাঁকে জানান নি!
অদম্য কৌতূহল নিয়ে স্বপনবাবু লেফাফাটি খুলে দেখলেন তার মধ্যে একটি চিঠি, যার নীচে স্বাক্ষর রয়েছে লোরার। কিন্তু কোথাও তার কোন ঠিকানা নেই। শুধু লেখা রয়েছে, "তোমার ঠিকানা আমি জানতাম না, তাই এ চিঠি পোস্ট করলাম তোমার পৈতৃক বাড়ির ঠিকানায়। প্রভু চাইলে একদিন এ চিঠি তোমার কাছে পৌঁছবে। আমি প্রভুর শরণে চললাম। প্রভু চাইলে হয়ত আবার দেখা হবে..."
কি করে লোরার ঠিকানাটা পাওয়া যেতে পারে, স্বপনবাবু যখন সেটাই ভাবছেন ঠিক তখনই কলিং বেলটা বেজে উঠল। দরজা খুলতেই তিনি দেখলেন হাসি মুখে দণ্ডায়মান আসলম খান সাহেব আর তাঁর পিছনে এক প্রব্রাজিকা , যাঁর হাত আর কাঁধের ব্যাগ বইয়ে ভরা। স্বপনবাবুকে প্রণাম জানিয়ে প্রব্রাজিকা তাঁর দিকে এগিয়ে দিলেন একটি পুস্তিকা। বইটির প্রচ্ছদে ছাপা লেখিকার নাম – প্রব্রাজিকা লোরা ফারনাণ্ডেজ। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে আসলম খান সাহেব বললেন, "এক্সকিউজ মি, আপনারা কথা বলুন, আমি একটা আরজেন্ট কল করে আসছি..."
( সমাপ্ত )
All Bengali Stories
146
147
148
149
150
(151)
152
153
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717