Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

বিকালে ভোরের শিউলি

Bengali Story

All Bengali Stories    75    76    77    78    79    80    81    82    83    (84)     85    86   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



বিকালে ভোরের শিউলি

লেখক - খগেন্দ্রনাথ অধিকারী
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সাউথ সিটি কলেজ, কলিকাতা

পর্ব ৪

Part 1    Part 2    Part 3   

দীপ্তি, "তুই এত কথা জানলি কী করে সাহি?"

সাহি, "জানি বলেই সবাই তোকে রেবেকা বলে ঘৃণা করলেও, অত্যন্ত নিচু চোখে দেখলেও আমি বারে-বারে ভেবেছি যে দীপ্তির প্রণয়-নাটকের শেষ দৃশ্যটা না জেনে তাকে রেবেকা বলে চিহ্নিত করা অন্যায় হবে। তাই চল্লিশটা বছর ধরে আমি তোর সাথে অপেক্ষায় আছি এই রহস্যের উদ্ঘাটন করতে। উপরওয়ালা আজ এই সুযোগ বোধ হয় করে দিলেন। বল, যাকে তুই এত ভালবাসতিস, যিনি তিল-তিল করে গড়ে তুলেছিলেন, তাঁকে তুই বিয়ে করলি না কেন?"

"সাহানা, আজ যে আমি উদয়পুর কলেজের অধ্যাপিকা, সেটাও স্যারেরই দান। একমাস দশদিন বাদে আমি অবসর নেব, তারপর ক'দিন বাঁচব জানি না।"

"ছিঃ-ছিঃ এ কথা বলছিস কেন তুই?"

"না:, সে তুই বুঝবি না। আমি এই অধ্যাপনা নিয়েই বেঁচে আছি। আমার বাবার বংশে প্রচুর টাকা আছে; শ্বশুরকুলেও। কিন্তু আমার পিতৃকুলে কেউ কখনো আমার মত এত সম্মানের পেশায় যায়নি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছি। এম.এ তে আমার সোশিয়লজি পেপার ছিল। স্যারই সেটা ঠিক করে দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে আমি এখনে তিন দশক ধরে এই গার্লস কলেজে 'ভারতীয় সমাজজীবন এবং সেখানে মেয়েদের অবস্থান' নিয়ে পড়াচ্ছি। কিন্তু সাহি তথ্যে আর বাস্তবে অনেক ফারাক রে। আমি সত্যি স্বপ্ন দেখতাম, আমি এমন একজনকে জীবনসঙ্গী করেছি যে আমার দেহ-মন সবটাই জুড়ে থাকবে। কিন্তু তা হল কই? পারলাম কই? সেই সুযোগ হাতের মুঠোর মধ্যে এনেও তাকে শেষ পর্যন্ত পেলাম কই?"

"কেন? তোর স্বামী একজন ডাক্তার, তুই সুখী নস তাতে?"

"দেখ সাহি, আমার স্বামী একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার; পুরানো জমিদার। টাকার অভাব নেই। তাছাড়া ও খুব ভাল মানুষ। আমায় ভালও-বাসে খুব। ক'জন মেয়ের এমন কপাল হয় বল? সুতরাং সুখী তো আছে বটেই। কিন্তু তুই আমার প্রিয় বান্ধবী, সহপাঠিনী। তাই একটা কথা তোকে বলি, স্বামী-স্ত্রীর পেশা যদি একই হয়, একই বিষয়ে হয়, তাহলে তার থেকে দাম্পত্য সুখ আর কিছুই হয় না। আমিও আমার সাবজেক্টের একজন অধ্যাপককে স্বামী হিসেবে পেতে পারতাম, জ্ঞানচর্চায় অবদান রাখতে পারতাম; সে সুখ আমার জুটল কই? এ বেদনা আমায় কুরে-কুরে খাচ্ছে, আজো এই বয়সেও।"

"কিন্তু দীপ্তি, এই দায় কার?"

"সবাই বলবে এই দায় আমার। আমিও তা পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারি না সাহি। তবে কী, সামাজিক পরিস্থিতি আমায় বাধ্য করেছে এত দূর এগিয়েও পিছিয়ে আসতে? আমরা নারীমুক্তি, আধুনিকতা ইত্যাদির কথা বলি। কিন্তু বাঙালী সমাজে এর দাম কতটুকু? আমরা বড় লোক, ওরা গরীব। স্যারের পায়ের তলার আর্থিক ভিত্তি ছিল খুব দুর্বল, আমিও বেকার। তবু পালিয়ে যাবার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু কড়া পাহারা। তখন আজকের মত মোবাইল ফোন ছিল না। আত্মীয় পরিজন দ্বারা বন্দি হয়ে গেলাম। চলল বিরামহীন মগজ ধোলাই। সেই চল্লিশ বছর আগে অধ্যাপকদের তখন খুব কম মাইনে, সে তুলনায় ডাক্তারদের মাইনে অনেক বেশী। বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। তারপর যা হয়, বিয়ে করলাম ডাক্তারবাবুকে।"

"তাহলে আজ আর এত দুঃখ কেন তোর?"

"দুঃখ:, আমি বৈভব পেয়েছি। দুটি কন্যা সন্তান পেয়েছি। ডাক্তারবাবু আমায় সব দিয়েছেন। কিন্তু, আমার মনের ক্ষুধা, আমার বুদ্ধিবৃত্তির চাহিদা মেটাতে পারেন নি, যেটা পেরেছিলেন স্যার। উনি সেটাকে পরিণত রূপ দিতে পারতেন। শুধু তাই না সাহি, অপূর্ণতা ও অতৃপ্তির দুই দংশনের পাশাপাশি আছে আমার বিবেকের দংশন। একটা নিষ্পাপ, সহজ-সরল, গরীব-দরদী, যিনি পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে চান নি, আমিই তাকে জোর করে পাহাড়ের চূড়ায় তুলে, নিঃস্ব করে, নিষ্ঠুর ভাবে ধাক্কা মেরে খাদে ফেলে দিয়েছি। এই দংশনের জ্বালায় আমি আজ ক্ষত-বিক্ষত। আমার অসহায়তার কথা আমি তাকে বলে আসতে পারি নি। অসম্মান করে আমার বাড়ির লোকরা আমার বিয়ের পর আমার বিয়ের চিঠি ডাকে পাঠিয়েছিলেন উনাকে। আর আমি যখন ডাক্তারবাবুর সাথে বিয়েতে রাজী হচ্ছি না, তখন ঐ কমলদা স্যারকে খুব অপমান করেছিলেন।"

চোখ মুছতে-মুছতে দীপ্তি বলে চলল, "একদিন যে মানুষটাকে আমার বাড়ির লোকরা গরীব বলে অসম্মান করেছে, আমায় তার সাথে ঘর বাঁধতে বাধা দিয়েছে, সেই মানুষটারই আজ কত-কত নাম। লেখক হিসেবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের অধ্যাপক হিসেবে তার আজ কত খ্যাতি। আর আমার? আমি বিয়ে করার পর স্যার ঘৃণায় আর বিয়ে-থা করবেন না ঠিক করে ছিলেন। অসুস্থ মাসীমার জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত উনি মাসীমারই পছন্দ করা একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন এবং সে আমার থেকেও সুন্দরী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানেরই ছাত্রী।"

"বাব্বাঃ! এ খবর তুই পেলি কী করে?"

"যে করে তুই আমার সব খবর পেয়েছিস। ওর নাম মানসী। আমার থেকে এক বছরের ছোট। সে-ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা। স্যারের সঙ্গে ওর অনেক বই আছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্সের। খুব ভাল প্রবন্ধ লেখিকা। তাছাড়া খুবই জনপ্রিয় নেত্রী, সুবক্তা ও বাচিক শিল্পী। আমর তো সবই হারিয়ে গেছে রে। আমার এখন কাজ শুধু একটু কলেজে পড়ানো আর ২৬ বছরের যুবতী সাজার প্রচেষ্টা চালানো। ডাক্তারবাবু আমায় এই বয়সেও কচি দেখতে ভালবাসেন।"

একটু থেমে দীপ্তি আবার বলে চলে, "মাঝে-মাঝে মনে হয় একবার পরিচয় লুকিয়ে মানসীর সাথে অন্তত ফোনে আলাপ করি। স্যারের সাথে কথা বলার মুখ তো আমার নেই।"

"ভালই তো, তাহলে ফোন করিস না কেন?"

"করি না, পরক্ষণেই এই ভেবে যে, রক্তমাংসে গড়া মানুষ আমি। যদি আবেগে দুর্বল হয়ে বেফাঁস কিছু বলে ফেলি। তাতে হয়তো মানসী, আমাকে আর স্যারকে ভুল বুঝবে। ওদের স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসায় চিড় ধরবে। অপরপক্ষে আমার ক্ষেত্রে যদি ডাক্তারবাবু এই সব ফোনাফুনি জেনে ফেলেন তাহলে হয়তো উনি আমাকে ভুল বুঝবেন। আমাদের মধুর সম্পর্কও বিষময় হয়ে উঠবে। তাই সেই ফেসবুকেই দেখি ওদের নানা জায়গায়, নানা খানে। কখনো মানসীর আবৃত্তির ভিডিও শুনি, সে স্যারের কবিতা আবৃত্তি করছে। অসাধারণ গলা ওর।"

"তোরও তো অসাধারণ গলা রবীন্দ্র-সংগীতে।"

"হয়তো হবে, কিন্তু সে তো গেছে জমাট মেঘে হারিয়ে।"

"অমন বলিস না দীপ্তি। যা হবার তা তো হয়ে গেছে।"

ঝাপসা চোখে উত্তর আসে, "হ্যাঁ, মোহনার কাছে এসে পর্বতে ফিরার কথা ভেবে এখন আর কী হবে?" একটু চুপ থেকে দীপ্তি বলল, "নে অনেক সময় নিলাম তোর। আমার কাগজ পত্র কী ঠিক করবি করে নে।"

"তোর কাগজপত্র সব সব ঠিক করে দিয়েছি রে। ভালো থাকিস। আর এই কার্ডটা রাখ, ফোন করিস। দশদিন পরেই অবসর নিয়ে চলে যাচ্ছি বাড়িতে। আর তুই যখন নিজের পৈত্রিক ভিটায় যাবি, তখন ফোন করিস। হারানো সেই অষ্টাদশীতে ফিরে যাবো কলেজের মাঠে দু'জনে।"

এবার বিদায়ের পালা। দুই বন্ধু দু'জনকে জড়িয়ে শ্রাবণের ধারায় ভেসে গেল, আবার কবে দেখা হবে কেউ জানা না। চোখ মুছে দু'জনই নেমে এল নীচে। দুধ সাদা গাড়িতে দীপ্তি উঠল। মঞ্চের মাইকে তখন হাল্কা সুরে ইন্দ্রাণী সেনের কণ্ঠে গান বাজছে,
"আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান।"

গাড়ি ছেড়ে দিল। অপলক দৃষ্টিতে সাহানা তাকিয়ে থাকল চলন্ত গাড়িটির দিকে। ওর মনে হল যেন, বিকেলে ভোরের শিউলি ভরা একটি গাছ ধীরে-ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে, বহু দূরে, দৃষ্টির অগোচরে। আবার নতুন গান বেজে উঠে, বেজে উঠে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে,
"ওরে আমার মন
কিসের তরে দেয় না ধরা ভালবাসার ধন..."

শুনতে-শুনতে আর দীপ্তির কথা ভাবতে-ভাবতে, আস্তে-আস্তে সিঁড়ি ভেঙে নিজের কেবিনের দিকে এগোতে লাগল সাহানা।
(সমাপ্ত )
Next Bengali Story


All Bengali Stories    75    76    77    78    79    80    81    82    83    (84)     85    86   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717