Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

কানামাছি


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    18    19    20    21    22    23    24    25    (26)     27      

শ্যামল বৈদ্য

Syamal Baidya
ত্রিপুরা সরকারের সলিলকৃষ্ণ দেববর্মণ পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রী শ্যামল বৈদ্য ত্রিপুরার একজন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক। সময় সময়ে ওনার অনেকগুলি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঠকদের কাছে খুব সমাদৃত হয়েছে। ওনার লেখা দুটি উপন্যাস ক্রমপর্যায়ে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হচ্ছে।


-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

কানামাছি
বাংলা উপন্যাস
লেখকঃ শ্যামল বৈদ্য, আগরতলা, ত্রিপুরা

Previous Parts: 1st Part     2nd Part     3rd Part    



৪র্থ পর্ব

সকাল থেকেই প্রকাশবাবুর তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মত বেড়ে গেছে; তিনি যেন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেন না। ঘরময় শুধুই ছটফট করে বেড়াচ্ছেন। স্ত্রী-র চোখে এই ছটফটানি ধরা পড়েছে দু-দিন আগেই। কিন্তু আসল ব্যাপারটা আঁচ না করে সরাসরি কিছু বলতেও পারছেন না। কিন্তু এতদিন নিখুঁত অভিনয় করে গেলেও আজ আর প্রকাশবাবু কিছুতেই সংযত রাখতে পারলেন না নিজেকে। তার স্ত্রী এবার জিজ্ঞেস করেই বসলেন, কী হল, তুমি ব্যাঙের মত এমন লাফাচ্ছ কেন?

প্রকাশবাবু চুপ করে বসে বললেন, লাফাচ্ছি! কোথায়? তুমি যে কী সব বলো না জয়া!

আমি ঠিক বলেছি, দু-দিন ধরে তুমি বেশ দৌড়ঝাঁপ করছো। কী ব্যাপার বলোতো?

আরে বাবা কিছু না।

ব্যাংকে কেন গেলে তুমি? টাকার হঠাৎ কেন দরকার হল বলো?

ব্যাংকে? কই নাতো?

হ্যাঁ, তুমি গেছো এবং টাকা তুলেছো। বলো কেন?

এই কী হল তোমার? কেন পুলিশের মতো জেরা করছো?

জয়াদেবী কড়া চোখে তাকিয়ে রইলেন স্বামীর দিকে। প্রকাশবাবু অনেক বড়ো বড়ো দায়িত্ব সামলেছেন জীবনে, কিন্তু নিজের স্ত্রী-র বেলায় তিনি একেবারেই দুর্বল। স্ত্রীকে লঙ্ঘন করার মতো সাহস তার কোনও কালেই ছিল না।

শোনো বউমা-বউমা করে যদি আবার হেদিয়ে ওঠো আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না। যেমন ছেলে তেমন তার বাপ! আশ্চর্য, একটা মানুষ ওই বাজে মেয়েটার সম্বন্ধে একটাও ভালো কথা বলছে না। আর উনি বউমা বউমা করে বাড়ি গরম করে ফেলেছেন। আমার ছেলেটা ওই প্রস্-মেয়েটার জন্য নিজের জীবনটা হারাতে বসেছিল। আমি বাড়িতে ওই মেয়েকে আর ঢুকতে দেব না।

জয়া - বলছো কী এসব তুমি! বাড়ির মেয়ে আর বউ হলো বাড়ির ইজ্জত।

কিসের ইজ্জত? এই মেয়েটা বিয়ের পর থেকে একবছর ধরে আমার ছেলেকে কী দিয়েছে? একটা লুম্পেনের সাথে লাইন মারছে, আমার ছেলেটাকে তার ধারে কাছে ঘেষতে দেয়নি। কী পেয়েছে অনি বিয়ে করে? একটা মুহূর্তের জন্য তার জীবনে শান্তি আনতে পারেনি এই মেয়ে। বারবার অনির অমঙ্গল চিন্তা করেছে, তাও ওকে আমি সহ্য করেছি। কিন্তু এবার আমার ছেলেকে যখন খুন করতে চাইল তখন সব সীমা সে অতিক্রম করে গেছে। আমি তাকে কিছুতেই ছাড়বো না। তলে তলে তুমি একটা কিছু করছো আমি ঠিক বুঝতে পারছি। কিন্তু তোমাকে স্পষ্ট বলে রাখছি আমি এই মেয়েকে আর বাড়িতে জায়গা দেব না। ফাঁসীতে ঝোলাবো ওকে আমি, তোমাকে বলে দিলাম। বেশ্যা মেয়েছেলে এবার বুঝবে। আর তোমাকে আবারও বলে রাখছি শোনো, এই মেয়ে আর আমার বাড়িতে ঢুকবে না, কিছুতেই না। আমি ওকে কিছুতেই বরদাস্ত করবো না। যদি তুমি এমন কোনও সিদ্ধান্ত নাও আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।

প্রকাশবাবু আর কিছু বলার সাহস পেলেন না। জয়াদেবীর রাগটা সব অর্থে অমূলক নয়। বউমা-রও অনেক ভুল ত্রুটি রয়ে গেছে। তিনি শ্বশুর, একই ছাদের নিচে থাকেন বলে অনেক কিছুর আঁচই গায়ে এসে লাগে। কিন্তু তিনি ভাবতেন এসব যৌবনের আবেগ থেকে হয়, ক-দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। মানুষ তার আলটিমেট ডেস্টিনিটা একসময় চিনতে পারে। কিন্তু ছেলে আর ছেলেরবউয়ের ঝামেলা যেন মিটতেই চায় না।বাড়িতে তাদের মধ্যে ফর্মাল কিছু কথাবার্তা ছাড়া কোনও কিছুই স্বামী স্ত্রী-র মতো হয় না। দু-জনেই কেমন উদাস-উদাস জীবন কাটায়। প্রকাশবাবু অনেক কিছুই বুঝতে পারতেন, কিন্তু তাদের নিজস্ব ঝামেলায় ঢুকতে চাইতেন না। তবে তার স্ত্রী এসব সহ্য করতে পারতেন না। ছেলের প্রতি অবিচারের প্রতিশোধ নিতে তিনি বউয়ের উপর নতুন নতুন ফন্দি বের করে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু কিছুতেই টলানো যায়নি এই মেয়েকে। তবে প্রকাশবাবু আশ্রয় দিতেন কমবয়েসি বধূটিকে নিজের মেয়ের মতোই।বাড়ির সবাই যদি তার শত্রু হয়ে ওঠে তাহলে সে থাকবে কার সাথে?

ঝোলাটা কাঁধে ঝুলিয়ে তিনি ঘর থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলেন। মোটরস্ট্যাণ্ডে গিয়ে দেখা হল সহদেববাবুর সাথে। সহদেববাবু তার সাথে দেখা করতেই এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।তাকে দেখেই তিনি ছুটে এলেন।

দাদা একটা কথা ছিল। একটু এদিকটায় আসুন।

দু-জনে আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালেন। প্রকাশবাবুর হাত চেপে ধরে সহদেববাবু বললেন, কাকে আপনি উদ্ধার করতে চাইছেন দাদা? এই পাষানী নিজেই তো খুন করতে চেয়েছে আপনার ছেলেকে। আপনি টাকা দিলে ওরা তো আরও দূরে পালিয়ে যাবে। অপরাধী কোনও দিন আর ধরা পড়বে না।

চমকে উঠলেন প্রকাশবাবু। তিনি যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। এসব কী বলছেন তার বেয়াই? নিজের মেয়ে সম্বন্ধে এ কথা তিনি কী করে বলতে পারলেন?

সহদেববাবু আবার বললেন, দাদা, এই যে এতগুলি টাকা আপনি দিচ্ছেন ওদের তার পরও আপনার বউমা ফিরে আসবে তো? মাধুর কিডন্যাপ হওয়া একটা সিরিয়াস নাটক ছাড়া আর কিছুই না। আপনার টাকাটা পেয়ে তাদের আরও সুবিধে হবে। তাদের এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তাটা আরও মসৃণ করবেন। চমকে ফিরে তাকালেন প্রকাশবাবু! আপনি আরও একবার ভেবে দেখুন। দয়া করে আপনি আপনার বউমাটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে এতগুলি টাকা ক্রিমিনালদের হাতে তুলে দেবেন না। এতে আপনার আমার মেয়েটার আরও সর্বনাশ হবে। দাদা, দয়া করে আপনি আমার কথাটা অমান্য করবেন না।

চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রকাশবাবু। এত দ্রুত ঘটনার পট পরিবর্তন হচ্ছে তিনি আর তার সাথে মানিয়ে নিতে পারছেন না। বারবার তিনি অংক করে হিসেব মেলাচ্ছেন একরকম আর তার ফল হয়ে যাচ্ছে অন্যরকম। তার মাথার উপর যেন দুর্ভাবনার পাহাড় নেমে এল। এখন কী করবেন তিনি? কিডন্যাপাররা তার বউমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। টাকা যদি তার বউমাকে রক্ষা করতে পারে তাহলে এই টাকা বুকে চেপে লাভ কী? টাকা দিয়ে ঘরের ইজ্জত যদি বেঁচে যায় তাহলে ওই লোকদের তিনি টাকা নিশ্চয় দেবেন। তার পুত্রবধূটি যদি বেইমান হয় তাহলে সে দোষ তার, কিন্তু তিনি নিজের দায়িত্বকে অস্বীকার করবেন কেমন করে?

আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না বেয়াইমশাই। আপনার মেয়ে যদি সত্যিই বেইমানী করে তাহলে সেটা তার দায়। আপনি যাই বলুন না কেন, আমি আমার পুত্রবধূকে বাঁচানোর চেষ্টা করবো। আমার মন বলছে বউমা এমন করতে পারে না। আপনারা এসব বাজে কথা বলছেন মাধবী সম্বন্ধে। এই ক-দিনে মেয়েটাকে কিছুটা হলেও তো আমি চিনতে পেরেছি। আসলে অনিরুদ্ধ-র সাথে, শাশুড়ির সাথে তার যতই ঝামেলা থাকুক আমার সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। সারাদিন আমার কাছেই তো ঘুরঘুর করতো, আমাকে সে সত্যিই বাবার মতো ভালোবাসতো। এই ভালোবাসার কোনও দাম নেই বলছেন? আমার মন বলছে সে বিপদে পড়েছে তাকে মুক্ত করতেই হবে আমার। দেখবেন বউমাকে আমার কাছ থেকে দূরে কেউ আটকে রাখতে পারবে না, সে বাড়িতে আমার কাছে ফিরবেই।

প্রকাশবাবু আবার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলে গেলেন।

অবাক হয়ে সহদেববাবু তাকিয়ে রইলেন! বারবার বাধা দিয়েও তিনি মানুষটাকে আটকাতে পারলেন না। নিজের পুত্রবধূর প্রতি এই লোকটার স্নেহ যে বুকে জমে আছে তাকে সন্মান জানানো ছাড়া আর কোনও উপায় রইল না তার। শ্বশুরের এমন ভালোবাসাকে যে মেয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে সে কোনও পরিবারে বধূ হওয়ার যোগ্য নয়। তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল মাধবীর উপর। এ কেমন মেয়ে যে তার স্বামী আর শ্বশুরের ভালোবাসাটা বুঝতে চাইল না। সংসার মানে তো শুধুই স্বামীর সাথে জীবন কাটানো নয়? স্বামী ছাড়া অন্য যারা পরিবারে থাকে তাদের জন্য মায়া আরও বেশি পড়ে যায়। তাদের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা, দায় দায়িত্বের মূল্যও তো জীবনে কম নয়। তার মেয়েটা এই ব্যাপারগুলিই বুঝতে চাইল না। কী করে তার মেয়ে এমন বেপরোয়া আচরণ করতে পারল তিনি বুঝতেই পারছেন না। বাড়িতে এমন সংস্কার কখনোই ছিল না যে মেয়ে এত দুর্বীনিত হয়ে উঠতে পারে। সংসার জীবনে মানানসই সমস্ত সংস্কার ওকে শেখানো হয়েছে। এমন একটা পরিবার থেকে বেরিয়ে মেয়েটা খুন করার পরিকল্পনা পর্যন্ত করে ফেলতে পারে? কিছুতেই বিশ্বাস করেতে পারছেন না সহদেববাবু। তবে যখন অনিরুদ্ধ এই কথা বলেছে তকন নিশ্চয় কিছু সত্যি লুকিয়ে রয়েছে। তিনি কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।

থানার সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। একজন পরিচিত কনস্টেবল তাকে চিনতে পেরে জানতে চাইল, আরে মাস্টারমশাই আপনি এখানে কী করতে এসেছেন?

আমতা আমতা করে তিনি বললেন, এ এস আই রণদাবাবু আছেন নাকি? আছেন তো, যান না ভিতরে গিয়ে কথা বলুন।

থানার ভিতর জীবনে খুব একটা আসতে হয়নি তার। এক দু-বার তিনি থানায় গেছেন অন্যদের কাজে কিন্তু কখনোই নিজের কাজে আসতে হয়নি। তবে প্রতিবারই মনে হয়েছে এই সমাজে নরক বলে কিছু থেকে থাকে তা হলে তার একটা চেহারা এই থানাই। রণদাবাবুর সামনে যেতেই উনি চোখ তুলে তাকালেন। তাকে দেখে চিনতে পারলেন পুলিস অফিসার। মুচকি হেসে বললেন, আরে সহদেববাবু না! বসুন।

সহদেববাবু বসলেন। তার স্ত্রীকে লুকিয়ে একদিন এই পুলিস অফিসারের সাথে তিনি কথা বলেছিলেন। সেদিন সব কথা প্রাণ খুলে বলা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ভালো করে না বুঝে সরাসরি মাধবী-র বিরুদ্ধে কিছু বলা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে মাধবী-র অতীত নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। তাই আজ এসেছেন তরুণের সম্বন্ধে কিছু বলে গেলে হয়তো তাদের তদন্ত করতে কিছুটা সুবিধে হবে। আজ থানায় এসে তার নিজেকে একটু সহজ মনে হতে লাগল। দারোগাবাবু হাতের কাজটা সেরে বললেন, এবার বলুন।

ক্যাসটা কতদূর এগোল জানতে এলাম দারোগাবাবু?

না তেমন এগোয়নি ইনভেস্টিগেশন চলছে। তবে মেটারটা ভীষণ জটিল।

কেন এমন মনে হচ্ছে আপনার?

কী করে অ্যাকসিডেন্টটা হলো? অ্যাকসিডেন্ট হলে গাড়িটাই বা অক্ষত রইল কী করে? আর অনিরুদ্ধবাবুর শরীরের আঘাতগুলিই বা কী করে হল? এসব ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানতে পারিনি এখনও। তাছাড়া অনিরুদ্ধবাবু তো কিছুতেই মুখ খুলছেন না। আচ্ছা যদি অ্যাকসিডেন্টই হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে মারের দাগ কোত্থেকে এলো?

কাউকে সন্দেহ করছেন? মানে বাইরের কারও এতে হাত আছে কিনা কিছুই জানতে পারলেন?

কী করে বুঝবো বলুন? আপনার মেয়েজামাইকে বলুন কোপারেট করতে। আমার মনে হচ্ছে ক্যাসটা জণ্ডিস মশাই। সব বড়-বাড়ির ব্যাপার স্যাপার একই রকম, গোলমেলে। আপনি কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলি?

হ্যাঁ বলুন।

আমার মনে হচ্ছে আপনার মেয়ে জামাই চান না আপনার মেয়ে ওর জীবনে আবার ফিরে আসুক।

মানে?

আরে মশাই যদি আপনার জামাই মুখ খুলে তাহলেই তো কিডন্যাপাররা ধরা পড়বে। আপনার মেয়েও উদ্ধার হবে। কিন্তু আমার মনে হয় আপনার মেয়েজামাই এটা চান না।

সেকি!

আরে মশাই জামাইর হয়তো কোনও চক্কর ফক্কর চলছে কোনও মেয়েছেলের সাথে। তাই ভদ্রলোক মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন।

আপনার ধারণা ঠিক নয়। অনিরুদ্ধ ভালো ছেলে।

আর ওসব বলবেন না মশাই, অনেক দেখেছি বুঝলেন। পরে দেখবেন বেরিয়ে এসেছে অন্য তথ্য, জামাই নিজেই আপনার মেয়েকে ইয়ে করিয়েছে। আচ্ছা ওদের মধ্যে কি কোনও সমস্যা আছে?

সহদেববাবু চুপ করে ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের কথা শুনছিলেন। এবার তিনি টেবিলে একটু ঝুঁকে বসলেন। আঙুল দিয়ে টেবিলে হিসেব করতে করতে বললেন, অঙ্কটা একটু জটিল দারোগাবাবু। আপনি যা ভাবছেন তার উলটো হিসেবও করতে পারেন। এমনও তো হতে পারে আমার মেয়েই অন্য কাউকে ফিরে পাওয়ার জন্য এই কাজটা করিয়েছে। নিজের পতিকে সে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই চক্রান্ত করেছে।

রণদাবাবু একটু চমকে উঠলেন! এসব কী বলছেন মশাই আপনি?

আমি ঠিকই বলছি দারোগাবাবু, আপনি তরুণ দত্ত নামের একটা ছেলেকে অ্যারেষ্ট করুন দেখবেন সব কিছু বেরিয়ে আসবে। আমার মেয়েও তখন প্রকাশ্যে চলে আসবে। আমি জানি সে কিসের লোভে এমন একটা জঘন্য কাজ করেছে। নিজের মেয়ে হলেও তাকে আমি ক্ষমা করবো না। বোস-বাড়ির লোকেরা নিজেদের সন্মানের কথা ভেবে থানায় বাড়ির বধূর বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না; কিন্তু আমি জানি আমার মেয়ে এই ঘটনায় সামান্য হলেও জড়িত।

দারোগাবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। জীবনে এমন ঘটনা প্রথম নিজের চোখে দেখলেন, যেখানে বাবা তার মেয়ের বিরুদ্ধে নালিশ করতে থানায় এসেছে। তিনি ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বললেন, কী নাম বললেন?

তরুণ দও।

কী করে লোকটা?

কিছুই করে না, আমার মেয়ে বলতো একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করে।

তার ঠিকানাটা বলুন।

সে কোথায় থাকে সেটা বলতে পারবো না তবে সে কোথায় কাজ করে সেটা বলতে পারবো।

ঠিক আছে এই কাগজে তার অফিস অ্যাড্রেসটা লিখে দিন।

কাগজটা ফেরত দিয়েই সহদেববাবু দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে এলেন। রণদাবাবু একা একা বসে ভাবতে লাগলেন। সত্যি এ বড়ো আজব দুনিয়া, মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক! না হলে বাবা নিজে থানায় এসে মেয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে যায়? অথচ যে সবচাইতে বড়ো সাক্ষী সেই চুপ করে বসে আছে! নিজের মনেই হাসতে হাসতে টেবিলে লাঠির এক ঘা মেরে বললেন, হালার হালা। আজকের দিনে মানুষ অনেক খারাপ হয়ে গেছে লোকে বলে, কিন্তু এখনও অনেক মানুষ আছে যাদের দেখলে বলতে ইচ্ছে হয় এই কথাটা ঠিক নয়।

রণদাবাবু যখন নার্সিংহোমে গিয়ে পৌঁছুলেন তখন বিকেল হয়ে গেছে। অনিরুদ্ধ-র সামনে টুল টেনে বসতেই অনিরুদ্ধ হেসে উঠল।

আমি যা জানি সব তো আপনাকে বলেছি। আর কিছু আমি দেখিনি।

রণদাবাবু হাসলেন।

মিঃ বোস, আপনাকে আমি কিছু জিজ্ঞাস করতে আসিনি। একটা খবর দিতে এসেছি।

হ্যাঁ বলুন।

খবরটা শুনে আপনি খুশি হবেন না দুঃখ পাবেন বুঝতে পারছি না। বলবো?

নিশ্চয়।

আপনার স্ত্রী মাধবীকে আমরা স্ট্রেস করতে পেরেছি। দু-একদিনের মধ্যেই সে ধরা পড়ে যাবে।

হঠাৎ অনিরুদ্ধ-র মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সাবইন্সপেক্টরের দিকে!

ধরা পড়ে গেছে মানে? সে কোথায় আছে?

সেটি এখন আপনাকে বলবো না। তবে এটা জেনে রাখুন আপনার স্ত্রী ও তার প্রেমিককে আপনি আড়াল করতে পারবেন না। আমরা জাল গুটিয়ে আনছি।

দেখুন, প্লীজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন। মাধুর কোনও দোষ নেই।

দোষ গুণ মশাই পরে হবে। কিন্তু পুলিসকে মিস্ গাইড করার জন্য আপনার বিরুদ্ধেও আমরা মামলা নেব। আপনি আপনার স্ত্রীকে বাঁচানোর ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাট সি ইজ এ কালপ্রিট। এটা আপনার মতো অফিসারের কাছ থেকে আশা করিনি আমি।

অনিরুদ্ধ চুপ করে বসে রইল কিছুক্ষণ। তারপর বিষণ্ণ চোখে বলল, আপনি হলে কী করতেন?

রণদাবাবু জোরে হেসে উঠলেন। তা তো জানি না। তবে আমার স্ত্রী আমাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে জানলে ছেড়ে দিতাম না। এই মহিলা তো আপনার শত্রু মশাই।

এসব ভুল শুনেছেন। কিছু ঘটনা আছে যা আগে আপনাকে বলা হয়নি। শুনুন, তার অমতে জোর করে বিয়েটা হয়েছিল আমার আর ওর বাবার আগ্রহে। সে বারবার আমাকে এই বিয়েতে রাজি হতে নিষেধ করেছিল। আমি তার কথাটা শুনিনি। তার কোনও দোষ নেই, ওকে আপনারা হ্যারাস করবেন না প্লীজ। আমি সুস্থ হয়ে ওকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত করে দেব। আর তার মনের মানুষের থেকে যেন দূরে থাকতে না হয় সেটা আমি করবো।

আরে মশাই সে তো বুঝলাম। কিন্তু তাই বলে সে আপনাকে খুনের পরিকল্পনা করবে আর আপনি সেটা মেনে নেবেন? এটা তো ক্রিমিনাল অফেন্স্। আপনি এ বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না। আপনি মশাই এত বড়ো অফিসার অথচ আপনার ভূমিকাটা তো সন্দেহজনক ঠেকছে। সি ইজ দ্য মাস্টারমাইণ্ড অব দিস কেস্। সিভিল সোসাইটি আপনার মতো লোকের কাছ থেকে কী আশা করবে তাহলে?

না না আমি তো আপনাকে বলেছি আমি কিছুই দেখিনি।

এটাই তো প্রবলেম।

ওদের মুখ কাপড়ে বাঁধা ছিল। ছ-সাতটা ছেলে ছিল।

আপনার স্ত্রী?

ওকে ওদের একজন বাইকে করে তুলে নিয়ে গেল।

আর উনি বাইকে উঠে চলে গেলেন! এটা কী হিন্দি সিনেমা নাকি মশাই?

না না সেও বাঁচার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি।

এটাই তো আবার প্রবলেম করে দিলেন মিঃ বোস। আপনাকে যখন মেরে ফেলতে চাইল ক্রিমিনালরা তখন আপনার স্ত্রী একবারও গাড়ি থেকে নেমে আপনাকে বাঁচাতে এলেন না? কী অসাধারণ স্ত্রী মশাই আপনার! ওরা ওকে বাইকে বসিয়ে নিয়ে গেল আর উনি এক আধবার, 'বাঁচাও - বাঁচাও' বলেও চেঁচালেন না!

অনিরুদ্ধ চুপ করে বসে রইল। মাধবী সেদিন গাড়ির ভেতর চুপটি করে বসে ছিল। যতদূর মনে পড়ে সে একবারও চিৎকার পর্যন্ত করেনি। কিন্তু পুলিসকে একথা কী করে বলবে সে?

আচ্ছা আরও একটা কথা বলুন তো দেখি। এই যে পাহাড়ে আপনারা ঘুরতে গেলেন তার প্ল্যানটা কার ছিল? আপনার স্ত্রী-র তো?

হ্যাঁ।

আপনি যেতে চেয়েছিলেন?

না।

পরে কেন গেলেন?

মাধু বারবার রিকোয়েস্ট করছিল। আমার স্ত্রী সেদিনই প্রথম আমাকে দেখে হেসেছিল। তাছাড়া সেদিনই প্রথম মাধু মন খুলে আমার সাথে কথা বলতে শুরু করেছিল। আমিও সেই আনন্দে ওকে খুশি করার জন্য সব কিছু করতে রাজি ছিলাম।

আমরা আপনার স্ত্রী-র কললিস্ট পেয়েছি। তিনি ওইদিন এবং আগেরদিন তরুণ দত্ত নামে একজন লোকের সাথে সারাক্ষণ কথা বলেছেন। কে এই তরুণ দত্ত? এত রাত অব্দি কী কথা বলেছেন উনি তার সাথে? রাত তিনটেয় লাস্ট কল্ পাওয়া গেছে। অথচ আপনার কাছে একটা কলও করেননি এই এক মাসে?

ইনসপেক্টর প্লীজ, আমার স্ত্রী অবুঝ। তার বয়েস কম বলে কিছু ভুল হয়তো সে করতে পারে। তবে তার ইনটেনশান মোটেই খারাপ ছিল না, আপনি তাকে বিপদে ফেলবেন না।

যদি সত্যি কথাটা আপনি বলেন, তাহলে আমি আপনার কথাটা ভেবে দেখতে পারি। কিন্তু আপনাকে সত্যি কথাটা বলতে হবে। তাহলে বলুন - তরুণ ছিল?

হ্যাঁ।

আপনি ওকে আগে জানতেন?

হ্যাঁ।

আপনার স্ত্রী আর তরুণ মিলে আপনাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল; তারপর তারা নিজেরা সুখে থাকার কথা ভেবেছিল তাইতো?

আমি ওসব জানি না।

থ্যাংক ইউ মিঃ বোস, আর না জানলেও চলবে। একমাত্র আপনি ছাড়া কেউ ওদের বাঁচাতে পারবে বলে মনে হয় না। দেখুন কী হয়। আসি।


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
Next part

Previous Parts: 1st Part     2nd Part     3rd Part    

All Bengali Stories    18    19    20    21    22    23    24    25    (26)     27