Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

গব্বর সিং-এর বাস্তব

Bangla Article

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে ) Result
--------------------------

All Bangla Articles    4    5    6    7    8    9    10    ( 11 )     12    13   

গব্বর সিং-এর বাস্তব
লেখক - শিলাজিৎ কর ভৌমিক, ধলেশ্বর, আগরতলা


## গব্বর সিং-এর বাস্তব:
লেখক - শিলাজিৎ কর ভৌমিক, ধলেশ্বর, আগরতলা

Gabbar Singh
১২ই নভেম্বর। এই দিনে ১৯৪০ সালে, ৭০ দশকের পরিপ্রেক্ষিতে বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় খলনায়ক, আমজদ খান জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। সেই আমজদ খান যিনি ভারতের সিনেমা-প্রেমিকদের কাছে আজও 'গব্বর সিং' নামে পরিচিত।

হ্যাঁ, 'শোলে' ছায়াছবির সেই গব্বর সিং যাঁর সংলাপ 'কিতনে আদমি থে...', 'আব তেরা কিয়া হোগা কালিয়া...', 'ইয়ে হাত হামকো দে দে ঠাকুর...'; আজও ভারতের হিন্দি সিনেমা-প্রেমিকদের মুখে-মুখে ঘুরে। প্রসঙ্গক্রমে, 'গব্বর সিং' নামক চরিত্রটি মধ্যপ্রদেশের এক ডাকাতের কার্যকলাপের অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে। সেই গব্বর সিং-এর বাস্তব-কাহিনী আজ বলতে যাচ্ছি।

১৯২৬ সালে ভিন্দ জেলার 'ডাঙ' নামক একটি গ্রামে 'গব্বর সিং' নামক সেই আতঙ্কের জন্ম হয় রঘুবর সিং নামে এক কৃষকের ঘরে। ছোটবেলাতেই তার দেহ ছিল সুঠাম এবং কুস্তি ছিল তার প্রিয় খেলা। সেই সঙ্গে চারিত্রিক দিক দিয়ে সে ছিল বড্ড একরোখা। এছাড়া, ডাকাতদের জীবন-জীবিকা, মানুষের মনে আতঙ্ক সঞ্চার করার ক্ষমতা তাকে খুব উৎসাহ দিত। এই কারণে, সে নিজে বড় হয়ে ডাকাত হতে চেয়েছিল। ১৯৩৫ সালে গব্বর নিজের গ্রাম থেকে পালিয়ে ডাকাত-সর্দার কল্যাণ সিং গুজারের দলে যোগদান করে। ডাকাতের খাতায় নাম লেখানোর পরে তাকে খুন করা, অপহরণ করা – ইত্যাদি সবরকম খারাপ কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিছু মাস পর, সে কল্যাণ সিং গুজারের দল ছেড়ে পাঁচ-ছয়জনকে নিয়ে নিজের একটা দল গঠন করে। ১৯৫৬ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গব্বরের হাতে অনেক মানুষ নিহত ও অপহৃত হয়। মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ ও গোয়ালিয়র জেলা, উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়াহ জেলা এবং রাজস্থানের ঢোলপুর জেলার মানুষের মনে গব্বর এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করল যে তাঁরা মুখে কুলূপ এঁটেছিলেন। গব্বরের সম্পর্কে পুলিশের কাছে নালিশ করার সাহসই কেউর ছিল না। গব্বর ছিল অসম্ভব কুসংস্কারি। এক তান্ত্রিক তাকে বলেছিল যে, যদি সে ১১৬ জনের নাক কেটে তাঁর আরাধ্য দেবীকে তুষ্ট করতে পারে তাহলে সে গুলিবিদ্ধ হয়েও মরবে না। এই কারণে, ডিসেম্বর ১৯৫৬ থেকে ডিসেম্বর ১৯৫৭ পর্যন্ত সে ১২জনের বেশী ব্যক্তির নাক কেটে ফেলেছিল। তিন বছরের মধ্যে সে ৩১টা খুন, ৩০টা অপহরণ, ৩২টা ডাকাতি এবং ২৬জনের নাক কেটে ফেলেছিল। এসব কীর্তির জন্যে গব্বর সিং নামটা শুনেই কেঁপে উঠত আশেপাশের গ্রাম ও উক্ত তিন রাজ্যের ঐ জেলার মানুষেরা। ঠিক 'শোলে' ছবির সেই সংলাপের প্রতিফলন, "সো জা! ওয়ারনা গব্বর আ জায়েগা।" পুলিশের সঙ্গে যত 'এনকাউন্টার' হয়েছিল, সেই সবগুলোতে গব্বর জিতে গিয়েছিল। কিছু সাহসী পুলিশ অফিসার মৃত্যুবরণও করেছিলেন। একটা এনকাউন্টারে সে অল্পের জন্যে বেঁচে গিয়েছিল। তখন তার সন্দেহ হয়েছিল যে, দিনপুরা গ্রাম থেকে কেউ নিশ্চয়ই পুলিশকে খবর দিয়েছিল। তখন গব্বর সেই গ্রামে গিয়ে ২১জন লোককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়। গব্বরের এই কীর্তি মানুষের মনের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়।

১৯৫৭ সালে মধ্যপ্রদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো 'এক ডজন লোক' যাঁদের নাক কেটে ফেলা হয়েছিল, তাঁদের নিয়ে বিধানসভার উদ্দেশ্যে এক মিছিল সংগঠিত করল। স্বাভাবিকভাবেই, রাজ্য সরকারের মাথা লজ্জায় নত হল এবং গব্বর-কে শেষ করে দেওয়ার ব্যাপারটা এক সম্মানের লড়াই হয়ে গেল। ডেপুটি পুলিশ সুপার রাজেন্দ্র প্রসাদ মোদীর উপর দায়িত্ব পড়ল গব্বর-কে শেষ করে ফেলার জন্যে। কেননা, ১৯৫৭ সালে রাজেন্দ্র প্রসাদ মোদীর নেতৃত্বে ডাকাত-রানি পুতলিবাঈ-কে শেষ করে ফেলা হয়েছিল। মোদীর প্রথম কাজ ছিল জনসাধারণের মনে পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরানো। তিনি ধৈর্য ও নৈপুণ্যের সঙ্গে সেই কাজ করেছিলেন। কিভাবে-

একদিন মোদী গোহাদ সেক্টর ক্যাম্পে কাজ করছিলেন। এমন সময় তিনি লক্ষ্য করলেন একটু দূরের একটা জায়গায় আগুন জ্বলছে। সেখানে গিয়ে দেখলেন, ঘুম-কা-পুরা নামক একটি গ্রামে দাউ -দাউ করে আগুন জ্বলছে। পুলিশ এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হল। তারপর সেখানে রাম চরণ নামক এক ব্যক্তি বলেছিলেন যে, "তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে সম্ভবত তখনও ঘরে আটকে আছে।" মোদী দৌড়ে গিয়ে সেই বাচ্চাকে উদ্ধার করল। সেই বাচ্চাটা আগুনে কিছুটা দগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। মোদী তাকে নিজের জিপে বসিয়ে রাম চরণ-কে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন এবং তাঁর হাতে কিছু টাকাও তুলে দিলেন।

২৫ দিন পরে রাম চরণ কৃতজ্ঞতা-বোধে মোদীর কাছে এলেন এবং প্রতিদান হিসেবে গব্বর সিং সংক্রান্ত তথ্য মোদীকে দিতে চাইলেন। তিনি মোদীকে গব্বর সিং-এর গোপন আস্তানা চুপি-চুপি দেখিয়ে দিলেন।

অবশেষে, সেই দিন ঘনিয়ে এল যেদিন রাজেন্দ্র প্রসাদ মোদীর নেতৃত্বে পুলিশের এক বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়। সেটা ছিল ১৩ই নভেম্বর। সেই অপারেশন হয়েছিল গোয়ালিয়র-ভিন্দ জাতীয় সড়ক এবং ন্যারোগেজ রেললাইনের মাঝখানের একটি জায়গায়। ৩০০জনের বিশেষ বাহিনী সেই জায়গার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে ছিল যেখানে ডাকাতেরা গোপনে বসবাস করত। পরিকল্পনা ছিল, ডাকাতদের তিনদিকে ঘিরে রাখা হবে এবং একটা 'অনুসন্ধানী দল' চতুর্থ দিকে গিয়ে তাদের ধরবে। এরপর অনুসন্ধানী দলের ৩০জন ডাকাতদের আস্তানার দিকে পৌঁছতে লাগল। পঁচাত্তর গজ পর্যন্ত এগোবার পর তাঁরা লক্ষ্য করলেন কিছু কালো জিনিস ঘোরাফেরা করছে। সেই কালো জিনিসগুলো আসলে ছিল একদল ডাকাত। অনুসন্ধানী দল এগোতেই লাগল। এমন সময় পলায়নের পথ না পেয়ে ডাকাতেরা অনুসন্ধানী দলের দিকে গুলি-চালনা শুরু করল। মোদীর ইশারায় পুলিশ তখন অবিলম্বে ময়দানে নেমে পালটা গুলি-চালনা শুরু করল।

কিছুক্ষণের মধ্যে ১২জন ডাকাতের দল গোপন ডেরা থেকে বের হয়ে অনুসন্ধানী দলের দিকে গুলি-চালনা শুরু করল। সেই দলটি রেললাইনের দিকে গিয়ে পালাতে লাগল। সেদিকে পুলিশবাহিনী ডাকাত দলের দিকে গুলি চালাতে শুরু করল। ফলত, দুজন ডাকাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। বাকিরা জাতীয় সড়কের দিকে পালাতে শুরু করল। অনুসন্ধানী দলের হাত থেকে বাঁচার জন্যে ডাকাতেরা পূর্বদিকে একটা বাঁধ পার হওয়ার চেষ্টা করছিল। পুলিশের এক দল সেই বাঁধ ঘেরাও করে রেখেছিল। তাঁরা সেই পলাতক ডাকাতদের উপর গুলি শুরু করল। রাস্তা না পেয়ে ডাকাতগুলো ঝোপে ঢুকে পড়ে পুলিশের উপর গুলি চালাতে থেকে।

সূর্য অস্ত হতে লাগল। মোদী বুঝলেন যে, অন্ধকার হয়ে গেলে ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা পেয়ে যাবে। ফলে, গব্বর সিং আবার হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে পাড়ত। তখন মোদী একটা গ্রেনেড ছুঁড়লেন ডাকাতদের দিকে। সেই প্রয়াস বিফল হল। ডাকাতেরা গুলি-চালনা অব্যাহত রাখল। এরপর মোদী দ্বিতীয় একটা গ্রেনেড ছুঁড়ে মারলেন এবং তারপর তাঁর লাইট মেশিন গান দিয়ে গুলি-চালনা করলেন। ডাকাতদের দিকে থেকে গুলি চালনা বন্ধ হয়ে গেল।

এরপর সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে পুলিশের দল এগিয়ে গিয়ে দেখলেন ডাকাতের দল রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভিন্দ-এর আতঙ্ক গব্বর সিং, যার নাম মুখে নিতে মানুষ কার্যত ভয়ে কাঁপত, পুলিশের কাছে নালিশ করতে ভয় পেত, যে ব্যক্তি এতজনের নাক কেটে ফেলেছিল, যার হাতে এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছিল – সে নিজে সম্পূর্ণ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে রয়েছিল পুলিশ অফিসার রাজেন্দ্র প্রসাদ মোদীর সাহসিকতায়।

পরের দিন ছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহরুর ৭০তম জন্মদিন। গব্বর সিং-এর মৃত্যুর খবর মধ্যপ্রদেশের পুলিস-প্রধান কে এফ রুস্তমজী নেহরুকে দিয়েছিলেন জন্মদিনের উপহার হিসেবে। নেহরু খুব খুশি হয়েছিলেন। রাজেন্দ্র প্রসাদ মোদীর অসীম সাহস ও নির্ভীকতাকে ভারত সরকার পুরস্কৃত করেছিল 'প্রেসিডেন্টস পুলিশ মেডেল' ও 'ফায়ার সার্ভিসেস মেডেল' দিয়ে।

পরবর্তীকালে, এই ভিন্দ-এর গব্বর সিং হয়ে গেল 'শোলে' ছায়াছবির গব্বর; যেই চরিত্রে নিখুঁত অভিনয় করার জন্যে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে আমজদ খান-এর নাম আজ স্বর্ণাক্ষরে লিখিত।
( সমাপ্ত )

(তথ্যসূত্র: The British, The Bandits and The Bordermen – From the Diaires and Articles of K F Rustamji; Edited by P V Rajgopal)


Next Bangla Article

All Bangla Articles    4    5    6    7    8    9    10    ( 11 )     12    13   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717