Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

ভারতীয় সংবিধান ও হিন্দু কোড বিল

Hindu code bill in bengali

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

All Bangla Articles    6    7    8    9    10    11    12    13    ( 14 )     15   

ভারতীয় সংবিধান ও হিন্দু কোড বিল
লেখক - শিলাজিৎ কর ভৌমিক, ধলেশ্বর, আগরতলা


## ভারতীয় সংবিধান ও হিন্দু কোড বিল
লেখক - শিলাজিৎ কর ভৌমিক, ধলেশ্বর, আগরতলা

hindu code bill

##
২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬শে নভেম্বর দিনটি সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

নানা সুযোগ-সুবিধের মধ্যে আমাদের সংবিধান নারী-ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করেছে। সেই প্রচেষ্টার এক উদাহরণ হল 'হিন্দু কোড বিল'। ১৯৫২ সালের ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আগে নেহেরু সরকার সংসদে সেই বিল পেশ করেছিলেন। এই বিলটির মূল কারিগর স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচয়িতা ডঃ বি আর আম্বেদকর, এবং এর নিম্নলিখিত কিছু অংশ নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে তীব্র বাদানুবাদ দেখা দিয়েছিল:

১. কোনো পুরুষ মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির ভাগ যেমন তাঁর পুত্র পাবে, ঠিক তেমনই তাঁর কন্যাও পাবে। এবং স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রীও সম্পত্তির অধিকার পাবে।

২. স্বামী বা স্ত্রী, উভয়পক্ষই ডিভোর্স দিতে সক্ষম থাকবে এবং তা সঙ্গত কারণে, যেমন নির্যাতন, দুরারোগ্য ব্যাধি ইত্যাদি।

৩. বিবাহিত থাকাকালীন কোনো পুরুষ মানুষ আর এক বিবাহ করতে পারবে না।

ফিরে দেখলে দেখা যায়, ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এক কমিটি গঠন করা হয় হিন্দুদের ধর্মীয় রীতিনীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য। সেই কমিটির পৌরোহিত্য করছিলেন স্যার বি এন রাও। পরবর্তীকালে, তিনি সংবিধান সভা (Constituent Assembly)-র সদস্য হয়েছিলেন। সেই কমিটি সারা ভারত ঘুরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মতামত সংগ্রহ করল। এবং ১৯৪৬ সালের মধ্যে রাও কমিটি একটা খসড়া তৈরি করে ফেলল। সেই খসড়া ছিল হিন্দুদের ধর্মীয় নিয়মকানুন নিয়ে এবং তা পরিবর্তিত রূপে।

১৯৪৮ সালে সংবিধান সভার সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান হলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী ডঃ বি আর আম্বেদকর। তিনি রাও কমিটির সেই খসড়া পুনরুদ্ধার করলেন। সেই খসড়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হল। অবশেষে, সেই খসড়া পরিণত হল 'হিন্দু কোড বিল' হিসেবে। সেই বিল এমন তর্ক ও বিতর্কের বীজ রোপিত করল যা আজও চলছে। সেটা হল, শুধু হিন্দুদের জন্য কেন আইনকানুন হবে? সংখ্যালঘুদের জন্যে কেন আইনকানুন হবে না? কেন হবে না 'Uniform Civil Code'?

১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে এই বিলের বিরুদ্ধে গঠিত হল 'সারা ভারত হিন্দু কোড বিল বিরোধী কমিটি'। সেই বিরোধী কমিটি সারা দেশে এই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অনেক হিন্দু সন্ন্যাসী সেই কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল যে, সংবিধান সভার হিন্দুদের ধর্মীয় রীতিনীতি পরিবর্তন করার কোনো অধিকার ছিল না। এসব আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতেন উত্তর ভারত থেকে আগত এক হিন্দু সন্ন্যাসী। তাঁর নাম ছিল স্বামী কর্পাত্রীজি মহারাজ। তিনি সংস্কৃতের পণ্ডিত ছিলেন এবং ডঃ আম্বেদকরের জাতের প্রসঙ্গ তুলে বরাবর কটূক্তি করতেন। তিনি বলতেন, "এক নিচু জাতের লোকের ব্রাহ্মণদের ব্যাপারে নাক গলাবার কোনো অধিকার নেই।"

সংসদের গোঁড়া হিন্দু সদস্যরা এই বিলের বিরোধিতা করে বলেছিলেন যে, যুগ-যুগ ধরে হিন্দু ধর্মের নিয়মকানুনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। রামনারায়ণ সিং নামক এক সাংসদ বলেছিলেন, "আমাদের দেশের পুরুষ মানুষদের আচার ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে বেদ। এবং বৌদ্ধধর্ম, ইসলামধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েও, বৈদিক ধর্ম যেমন ছিল, তেমনই আছে।" এরপর তিনি অভিযোগের সুরে বললেন, "তবে এখন পণ্ডিত নেহেরুর সরকারের প্রতিনিধি ডঃ আম্বেদকর সেসব নিয়মকানুন কলমের এক খোঁচায় মুছে দিতে চাইছেন। অথচ সেসব নিয়মকানুন এই পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই চলে আসছে।"

একটা অংশের বক্তব্য ছিল, আইন শুধু হিন্দুদের জন্যেই নয়, সব অংশের মানুষের জন্যে করতে হবে। যেমন ইন্দ্র বিদ্যাবাচস্পতি নামক এক সাংসদ বলেছিলেন, "আমার মনে হয় না যে শুধু হিন্দু নারীরাই নির্যাতিত। এবং বিলটি যদি সবার জন্য পাশ না করা হয়, তাহলে সেটি সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কানি দেবে।"

অন্যদিকে, এমন অনেক সদস্য ছিলেন যারা বিলটিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ঠাকুর দাশ ভার্গব। তিনি বললেন, "যারা সারা দেশের জন্য একটি সিভিল কোড চাইছেন, তাঁদের মতামতকে সম্মান জানিয়ে বলছি যে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের জন্য একটা সিভিল কোড বাস্তবসম্মত নয়। কেননা, মুসলিম সদস্যরা এই বিলের প্রতি আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁরা চান না যে তাঁদের ধর্মীয় নিয়মকানুন নিয়ে নাক গলানো হোক, যেটা তাঁরা আল্লাহ-র শেষ কথা বলে বিশ্বাস করেন।"

সংসদের বাইরে হিন্দু কোড বিলের তীব্র বিরোধীতা চলছিল। সেসব বিল-বিরোধীরা নিয়মিত দিল্লীতে জনসভা করতেন এবং চিৎকার করে বলতেন, "পাকিস্তান তোড় দো, নেহেরু হুকুমত ছোড় দো" (পাকিস্তানকে টুকরো করে দাও, নেহেরুর শাসন বর্জন করো)।

১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৫১ সালে হিন্দু কোড বিলের প্রধান বিরোধী নেতা স্বামী কর্পাত্রীজি মহারাজ এক জনসভায় হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, "যদি হিন্দু কোড বিলের একটা অংশও শাস্ত্রসম্মত হয়, তাহলে আমি এই বিল গ্রহণ করে নেব।" ঠিক তার পরদিন সেই সন্ন্যাসী তাঁর ভক্তবৃন্দদের নিয়ে সংসদ অভিযান করলেন। এবং পুলিশের লাঠিতে আহত হলেন। বিল নিয়ে সংসদ দিনের-পর দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। বিলের সমর্থনকারী ও বিরোধী – উভয়পক্ষই যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য পেশ করছিলেন। কোনো সমাধান-সূত্র বের হচ্ছিল না। এমন সময় প্রথম সাধারণ নির্বাচনের দামামা বেজে উঠল। সমাপ্ত হল সংসদের অধিবেশন। হিন্দু কোড বিল আইনে পরিণত হল না। ডঃ আম্বেদকর রীতিমতো ব্যথিত হলেন। এবং আইনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন।

এবার ফিরে আসা যাক নির্বাচনের কথায়। ফুলপুরের প্রার্থী হলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্বাচনী কেন্দ্র, এলাহাবাদ, অর্থাৎ ওনার জন্মস্থান থেকে ৩৫ কি.মি দূরে অবস্থিত ছিল। নেহেরুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রভু দত্ত ব্রহ্মচারী নামক এক সাধু। কিন্তু বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শেষ হাসি হাসলেন নেহেরুই এবং জামানত জব্দ হল তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর। নির্বাচনের পর প্রথম লোকসভার অধিবেশনেই নেহেরু হিন্দু কোড বিল পুনরায় পেশ করলেন, কিন্তু তা চার ভাগে ভাগ করে।

সেই অধিবেশনে নেহেরু এক তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "পুরুষ মানুষদের কখনোই রাম ও সত্যবান-কে অনুসরণ করতে উপদেশ দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র মহিলাদেরকেই বলা হয় সীতা ও সাবিত্রী-র মতো হওয়ার জন্যে।" সংসদে বাদানুবাদ চলতেই থাকে। কিন্তু তখন সংসদের বাইরে স্বামী কর্পাত্রীজি মজারাজদের আন্দোলন আর দেখাই যেত না। যাই হোক, নেহেরু তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে আইন পাশ করিয়ে ছেড়েছিলেন অবশেষে, এবং ১৯৫৫ সালে সংসদে পাশ হল 'Hindu Marriage Act'। এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৫৬ সালে পাশ হল 'Hindu Succession Act', 'Hindu Minority and Guardianship Act' এবং 'Hindu Adoption and Maintenance Act'।

কিন্তু আজও প্রশ্ন উঠে, অন্যান্য সব ধর্মাবলম্বীদের জন্যে কি একটা আইন প্রণয়ন করা যেত না? কেন 'Uniform Civil Code' আনা হল না? সে সময় সাংসদ সুচেতা কৃপালিণী বলেছিলেন, "আমাদের সাম্প্রতিককালের ইতিহাস মাথায় রাখা উচিত। আমরা জানি যে আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে কত সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই কারণে, সরকার এখন 'Uniform Civil Code' আনতে প্রস্তুত নয়। তবে আমি আশাবাদী যে ভবিষ্যতে এমন একটা আইন আসবেই।" কিন্তু সেই দিন আজও ....

(তথ্যসূত্র: India After Gandhi: The History of the World's Largest Democracy by Ramachandra Guha)


Next Bangla Article

All Bangla Articles    6    7    8    9    10    11    12    13    ( 14 )     15   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717