Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

লাবণ্য

Bengali Story

All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    (91)     92    93   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



লাবণ্য ( পর্ব ৫)

লেখিকা - রিয়া পণ্ডিত, দক্ষিণ তারাপুকুর, আগরপাড়া, কলিকাতা- ১০৯

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪   

◕ পর্ব ৫

লাবণ্য -- হ্যাঁ বলো।

সৌদার্য -- বলছি কালকে ফ্রি আছো?

লাবণ্য -- হমম, কিন্তু কেন?

সৌদার্য -- কাল তোমায় একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, তুমি কি যাবে আমার সাথে?

লাবণ্য -- কোথায়?

সৌদার্য -- সেটা এখন বলা যাবে না, যাবে কিনা বল?

লাবণ্য -- আচ্ছা যাবো। 99 সৌদার্য -- ওকে বাই, গুড নাইট, কাল রেডি থেকো আমি নিতে আসবো।

লাবণ্য -- ওকে, গুড নাইট।

লাবণ্য সকালে তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে গেল। আজ লাবণ্য একটা হালকা পিংক রঙের সিল্কের শাড়ি পড়েছে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চুলটা কোমর অব্ধি ছেড়ে রাখা। সৌদার্য ওর বাড়ির সামনে এসে কল দিয়ে নিচে আসতে বলল। সৌদার্য গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে চলেছে আর মনে-মনে বলছে -- এতক্ষণ! বাপরে! ১৫ মিনিট হয়ে গেল এখনো আসার নাম নেই! আমি এখানে বসে-বসে অপেক্ষা করে মরছি আর মহারানী এখনো সেজে চলেছেন, ধ্যাৎ! এরই মধ্যে লাবণ্যকে আসতে দেখে সৌদার্য হা... হয়ে গেল। লাবণ্য গাড়ির কাছে এসে ভুরু কুচকে বলল -- কি হল দরজা খুলবে না?

এতক্ষণে সৌদাৰ্যর জ্ঞান ফিরল। দরজা খুলে দিলে লাবণ্য গিয়ে সৌদাৰ্যর পাশের সিটে বসলো।

সৌদার্য -- খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে!

লাবণ্য -- ধন্যবাদ।

এরপর আর কোনও কথাই হল না দু'জনের মধ্যে। ফোনে অজস্র কথা হলেও সামনা-সামনি কথা হারিয়ে ফেলে দু'জনেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা গন্তব্যে পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে লাবণ্য দেখল একটা বৃদ্ধাশ্রম। লাবণ্য বেশ অবাক হয়ে কৌতূহল-বসত বলল -- আমার এখানে কেন এসেছি?

সৌদার্য এক ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বলল -- ভেতরে চলো দেখতে পাবে।

লাবণ্য আর সৌদার্য ভিতরে চলে গেল। ভিতরে যেতেই একজন ভদ্রমহিলা সৌদার্যকে উদ্দেশ্য করে বলল -- এতদিন পর এই বুড়ো বাপ-মাদের কথা মনে পড়ল?

সৌদার্য মাথা চুলকাতে-চুলকাতে হাসি দিল -- জানোই তো কত কাজের চাপ থাকে এখন। যাই হোক, দেখো কাকে নিয়ে এসেছি। ও হল লাবণ্য, আমার হবু বউ আর তোমাদের হবু বৌমা।

লাবণ্য ওনাদের উদ্দেশ্য করে নমস্কার জানালো। প্রায় ২০, ৩০ জনের মতো বয়স্করা ওখানে থাকেন। সবাইকে নমস্কার জানালো লাবণ্য। ভদ্রমহিলাটি লাবণ্যর কাছে গিয়ে ওর থুতনিতে হাত বুলিয়ে বললেন -- বাহ: ! বেশ মিষ্টি দেখতে তো, আমাদের ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে। বাকিরাও সম্মতি জানালো হাসি দিয়ে। সৌদার্য খানিক লজ্জা পেয়ে গেল, লাবণ্যও।

একজন ভদ্রলোক বললেন -- বসো তোমরা, জানো মা, তুমি খুব ভাগ্যবতী। এমন একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে ক'জনই বা পায়। এই বৃদ্ধাশ্রমটা সৌদাৰ্যর তৈরি, ওই আমাদের এখানে এনে রেখেছে। নিজেদের ছেলে - মেয়েরা তো আর ঠাই দিলো না, এই ছেলেটা আমাদের নিজের বাবা - মায়ের মতো ভালোবাসে। বিশ্বাস করো মা, এত ভালোবাসা নিজের ছেলে - মেয়ের কাছ থেকেও পায়নি। এখন ও-ই আমাদের আপন ছেলে। দেখবে মা, তুমি খুব সুখী হবে।

লাবণ্য মনে-মনে ভাবছে -- মানুষটাকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। একটা মানুষ এতটা পারফেক্ট কি করে হতে পারে? উনি একজন ভালো ডাক্তারই না শুধু, একজন ভালো মানুষও বটে। সত্যি আজকালকার দিনে ওনার মতো মানুষ পাওয়া বড়োই দুষ্কর।

একজন ভদ্রমহিলার কথায় লাবণ্যর ভাবনায় ছেদ পড়ল।

ভদ্রমহিলা -- তোমারা কিন্তু আজকে আমাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করে যাবে।

লাবণ্য আর সৌন্দর্য একসাথে বলল -- আচ্ছা।

দু'জনে সারাদিন ওনাদের সাথে ভালো সময় কাটিয়ে অনেক গল্প করে রাতে বাড়ি ফিরে গেল। বাড়ি ফিরেও লাবণ্য সৌদার্যর কথা ভেবে চলেছে। আজ ওর জন্য লাবণ্য কিছু আলাদা অনুভূতি অনুভব করছে। লাবণ্য মনে-মনে ভাবছে -- সত্যি পৃথিবীতে কতরকমের মানুষ আছে! যারা বিনা স্বার্থে মানুষের সেবা করে যায়, সৌদার্যও তাদের মধ্যে একজন। বাবা - মা ঠিকই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমার জন্য। এরকম একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চলেছি আর আমি উনাকেই এতদিন মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না! ওনাকে নিয়ে যে 'কিন্তু-কিন্তু' ভাবনাটা ছিল, সেটাও আজ দূর হয়ে গেল। এতদিন শুধুমাত্র বাবা - মা'র কথা অনুযায়ী আমি বিয়েটা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আজ আমি মন থেকে রাজি সৌদার্যর সাথে জীবন কাটানোর জন্য।

এভাবে কেটে গেল কয়েকটা দিন, এখন মাঝে-সাঝেই ওরা একসাথে বেরিয়ে পরে ঘুরতে। আস্তে-আস্তে সৌদার্যকে ভালো লাগতে শুরু করেছে লাবণ্যর। ওর একটা ম্যাসেজের আশায় অপেক্ষা করে বসে থাকে লাবণ্য, লক স্ক্রিনে একবার ওর নাম ফুটে উঠলে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। নিজের অজান্তেই সৌদার্যের প্রতি বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি হয়ে গেছে লাবণ্যর মনে। সৌদার্যও লাবণ্যকে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছে। ও যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছে লাবণ্যর মনে জায়গা করে নিতে, কিন্তু ওর জানা নেই যে, ও সবটাই সফল হয়ে গেছে।

লাবণ্যর এতটা পরিবর্তন ওর মা- বাবাও লক্ষ্য করেছেন। ওনারা খুব খুশি হয়েছেন মেয়েকে আগের মতো ফিরে পেয়ে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই ছেলেটা নিজের ভালোবাসা দিয়ে, ভালো ব্যবহার দিয়ে জয় করে ফেলেছে লাবণ্যর মন।

আর দুদিন পর ওদের বিয়ে। লাবণ্য ঠিক করেছে বিয়ের দিন সৌদার্যকে জানাবে ওর মনের সমস্ত অনুভূতিগুলোর কথা। জানাবে যে, ও মন থেকে চায় সৌদাৰ্যর সাথে নতুন করে জীবন শুরু করতে, জীবনের বাকিটা পথ সে সৌদাৰ্যর সাথে চলতে চায়। দেখতে-দেখতে বিয়ের দিন উপস্থিত হল, অপেক্ষার অবসান হল লাবণ্য আর সৌদার্যর। সকালে দধিমঙ্গল থেকে শুরু করে গায়ে হলুদ, সমস্ত নিয়ম পালন করা হল। দুপুরের দিকে লাবণ্যর ফোন বেজে উঠলো...

লাবণ্য -- হ্যালো।

সৌদার্য -- কি ম্যাডাম প্রস্তুত তো বিয়ের জন্য? মানে বিয়েটা হচ্ছে তো? পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যানিং নেই তো? শয়তানি হাসি দিয়ে জিভ কেটে জিজ্ঞেস করলো সৌদার্য।

লাবণ্য মিথ্যে অভিমান দেখিয়ে বলল -- আজকের দিনেও ঠাট্টা করা হচ্ছে মশাই আমার সাথে?

সৌদার্য মিচকি হেসে বলল -- না-মানে, ভীষণ খিদে পাচ্ছে, সময়ই কাটছে না। তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু মজা করি, সময়টা কেটে যাবে।

লাবণ্য ভুরু কুচকে বলল -- আজকের দিনেও খাই-খাই। যাই হোক, ওসব কথা বাদ দাও। বলছি, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

সৌদার্য কৌতূহলের সুরে জিজ্ঞেস করলো -- কি সারপ্রাইজ ম্যাডাম?

লাবণ্য এখন বলা যাবে না, আসলেই জানতে পারবে। আর শুনুন, বেশি অপেক্ষা করাবেন না, সময় মতো চলে আসবেন। এখন রাখি।

সৌদার্য -- বাবাঃ! কতো সাসপেন্স। ওকে বাই।

বিকেলে মেকাপ-ম্যান লাবণ্যকে তৈরি করে দিলো। লাল আর সবুজ রঙের বেনারসির সাথে চুলে খোপা, জুই ফুলের মালা দিয়ে সাজানো। তাতে লাল রঙের ওড়না আটকানো। মাথায় টিকলি, কানে ভারি ঝুমকো, নাকে নথ, হাতে বালা, রতনচূর, কঙ্কণ, গলায় সীতাহার আরও নানা অলংকার দিয়ে সাজানো হয়েছে লাবণ্যকে। মুখে নানা রকম মেকআপ, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক; সব মিলিয়ে কোনও রাজকুমারীর থেকে কম লাগছে না। যে কোনও মেয়ের সৌন্দর্য বিয়ের সাজে দ্বিগুণ বেরে যায়। ওদিকে সৌন্দর্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পরেছে সময় মতো, লাবণ্যকে কনের সাথে দেখার ইচ্ছেটা আর সামলে রাখতে পারছে না। লাবণ্যর বাবা ওর ঘরে আসলো।

লাবণ্যর বাবা -- তুই রেডি মা?

লাবণ্য -- হ্যাঁ বাপি।

লাবণ্যর বাবা লাবণ্যর দিকে চোখ পরতেই বলল -- আমার প্রিন্সেসটাকে আজ সত্যি-সত্যি প্রিন্সেস লাগছে। লাবণ্য ওর বাবাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। লাবণ্যর বাবার চোখেও জল এলো। নিজের প্রিন্সেসটা আজ বাড়িটাকে ফাকা করে চলে যাবে, চোখে জল আসাটাই তো স্বাভাবিক। যদিও-বা প্রতিটি মেয়েকেই একদিন নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয় অন্য এক বাড়িতে। তবু আজকের এই মূহুর্তে কেউ চোখের জল আটকে রাখতে পরে না।

লাবণ্যর বাবা লাবণ্যর মুখটা তুলে বললেন -- কাঁদিস না মা, দেখবি তুই খুব সুখী হবি। সৌদার্য তোকে খুব সুখে রাখবে, ও খুব ভালো ছেলে। আমি যাই অনেক কাজ পরে আছে।

লাবণ্য -- আচ্ছা।

অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল, সৌদার্য এখনও এসে পৌঁছায়নি দেখে লাবণ্য খুব চিন্তা করছে; সে ঘরের মধ্যে পায়চারি করা শুরু করে দিয়েছে। ফোনটা নিয়ে যেই সৌদার্যকে ফোন করতে যাবে। ওমনি বাইরে থেকে 'বর এসেছে, বর এসেছে' শুনতে পেয়ে দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। খুশিতে লাবণ্যর মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেছে। ফাইনালি আবার ও নতুন করে জীবনটাকে শুরু করতে চলেছে। কিছু সময় পর লাবণ্যর কয়েকটা বন্ধু ও দাদা এসে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে ওকে তুলে নীচে নিয়ে গেল। পান পাতা দিয়ে নতুন কনের মুখ ঢাকা। যথাযথ নিয়ম মেনে শুভ দৃষ্টি সম্পন্ন হল। শুভ দৃষ্টির পর বিয়ের পিড়িতে বসানো হল।

সৌদার্য লাবণ্যর কানের কাছে মুখটা নিয়ে বলল -- কি বলবে বলেছিল না, বিয়ের মণ্ডপে?

লাবণ্য সৌদাৰ্যর কানের কাছে গিয়ে বলল -- আমি তোমাকে ভালবাসি।

এই প্রথম লাবণ্য সৌদার্যকে এই কথাটি বলল। সৌদার্য কিছুই বলল না, শুধু ওর মুখে জয়ের হাসিটি স্পষ্ট। তা দেখে লাবণ্যর বুঝতে অসুবিধা হল না, সৌদার্য কি বলতে চাইছে।

( সমাপ্ত )

অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪   

Next Bengali Love Story


All Bengali Stories    84    85    86    87    88    89    90    (91)     92    93   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717