Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

অপুর কথা

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা

All Stories   ◍    21    22    23    24    (25)     26    27    28    29   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



অপুর কথা ( ৪র্থ পর্ব )

মিলির মনে আজ এক অপূর্ব আনন্দ, এক অচেনা খুশী। সে বাড়িতে ঢুকে দেখল বাবা ঘরের দাওয়ায় আনমনে বসে আছেন। না জানি কি খেয়ালে ডুবে গিয়ে মনে মনে মুচকি হাসছে। মিলি প্রথমে অবাকই হল যে, কেন বাবা এখনো নেশায় ঢুলে পড়েনি? কারণ এমন সময়ে বাবা বিনা নেশাতে থাকতে, সে কখনো দেখেছে কি না মনে পড়ে না। সে ডাক দিল “বাবা!”

তার ডাকে ব্রজহরির চমক ভাঙ্গল। সে যেন লাফিয়ে উঠল “মা, তুই এসেছিস। আয় আয় কাছে আয়। আমার পাশে বস। আর বল তোর দিদিমণির সাথে কি কি কথা হল ! তুই কি কি বললি। সে কি কি বলল?”

বাবার মুখে এমন কথা, মিলি যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে বাবার পাশে বসে অনেক গল্প করল। শেষে বলল “ দিদিমণি আরেকটি কথা বলেছে -”

ব্রজহরিঃ কি?

মিলিঃ দিদিমণি বলেছে যে তুমি যদি আর নেশা কর, মদ-গাজা খাও তবে দিদিমণি আর কখনো তোমার সাথে কথা বলবে না আর আমাকেও আর কাছে রাখবে না।

ব্রজহরি যেন ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল “দূর এই ছাই-ভস্ম কি কেউ খায়। আমি যে এখন আর মরতে চাই না। আমি বাঁচতে চাই, অনেক অনেক দিন বাঁচতে চাই।ওঃ, আজ যে আমার কত আনন্দ হচ্ছে, আজ যে আমার কত খুশির দিন। আমাদের সবার আনন্দের দিন। হে ভগবান, হে ঈশ্বর, তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”

মিলি ভীষণ অবাক হয়ে বলল “ আজ খুশির দিন? আমাদের আনন্দের দিন? কেন বাবা?”

ব্রজহরি একবার মিলির চোখে চেয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে একটু হেসে বলল “তোর দিদিমণিটি কে, তুই চিনেছিস মা? তুই কি জানিস, তুই যাকে দিদিমণি বলে ডাকিস, সে কে?”

মিলি যেন মনে মনে একটু ধাক্কা খেল। বলল “তিনি তো রায় বাড়ির মেয়ে।”

ব্রজহরিঃ না রে না। তার আরেকটা পরিচয় আছে। গোপন পরিচয়, এ পরিচয়টা কেউ জানে না। তুই ও জানিস না মা। আমি জানি আর তোর দিদিমণি জানে। পরম শান্তিতে মুচকি হেসে ব্রজহরি বলল - তুই যাকে দিদিমণি বলে ডাকিস সে যে তোর আপন বড় বোন। আমার বড় মেয়ে, অপু।

যেন একটা ঝড় এক পলকেই মিলির দুই কানের পাশ দিয়ে বয়ে গেল। যেন একটা ভূমিকম্পে কাঁপতে লাগল মিলির দেহ মন। সে যেন বাবাকে বিশ্বাসই করতে পারল না। ঘরে শুয়ে ব্রজবাসী মন দিয়ে তাদের কথা শুনছিল, সে ধর-ফরিয়ে উঠে বসল।

মিলি বোবার মত হা-করে বাবার চোখের দিকে শুধু তাকিয়েই রইল। মুখে তার কোন কথা এল না। ব্রজহরি মেয়ের গালে আদর করে বলল “হ্যাঁ মা, সে তোর বড় বোন, অপু। তখন তার বয়স চার-পাঁচ, একদিন নদীতে জল আনতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম সে জলে ডুবে মরে গেছে। আজ তাকে আমি ফিরে পেলাম। বাপ-মায়ের চোখ নিজের ছেলে মেয়েকে চিনতে কি কভু ভুল করে মা? আর এটাও জেনে রাখ, সে তোকে খুব ভালই চিনতে পেরেছে।”

মিলি তেমনি হা হয়ে বসে রইল। তার সব হিসেব একে একে যেন মিলে যেতে লাগল। সেইই বাজারে হাতের তিলটা দেখে মিলির হাতটাকে খপ করে শক্ত করে ধরা। বাবার নামটা শুনে কেঁপে উঠা। ইচ্ছা করে সব ফুল অনেক দামে কিনে নেওয়া। পাশে বসিয়ে পেট ভরিয়ে চা-নাস্তা করানো। রায় বাড়িতে এত আদর আপ্যায়ন। সবার সামনে বুকে জড়িয়ে ধরা। নিজের ছোট বোন বলে উপেন রায়ের কাছে পরিচয় দেওয়া। আলমারি খুলে যা ইচ্ছে নিয়ে যেতে বলা। এত চাকর বাকর থাকতে ও মিলির সাথে সাথে সবাইকে জল পরিবেশন করা। আর সব শেষে এতগুলি টাকা মিলি হাতে গুজে দেওয়া। মিলি যেন তার সব উত্তর খুঁজে পেতে লাগল।

সে যেন পাথরের মত শুধু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তার দুচোখ বেয়ে জলের ধারা বইতে লাগল। ব্রজহরি মেয়ে মাথাতে হাত রেখে বলল “কাঁদিস না মা, কাঁদিস না। আজ তো আমাদের খুশি দিন। আজ যে আমাদের আনন্দের দিন।”

মিলি দিদিমণির দেওয়া টাকাগুলি বাবার দিকে বাড়িয়ে দিল “দিদি দিল।”

টাকা গুলির দিকে তাকিয়ে ব্রজহরি হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠল “আমি জানতাম, আমি জানতাম। সে আমার মা। সে আমার হারিয়ে যাওয়া অপু।” টাকা গুলি নিয়ে ব্রজহরি পাগলের মত মাথায় ঠেকাতে লাগল।

ঘরে ব্রজবাসীর বুকেও ঝড় বয়ে যেতে লাগল। সে সব কথা কান পেতে শুনছিল। মনে মনে শুধু জপতে লাগল “আমাকে ক্ষমা করে দে মা। আমাকে ক্ষমা করে দে।”

পরদিন ভোর বেলাতে মিলির ঘুম থেকে উঠার আগেই ব্রজহরি স্নান সেরে তৈরী। মিলি ঘুম থেকে উঠে বাবাকে এমন দেখে একটু চমকে বলল “এত সকাল সকাল কোথায় যাবে বাবা?”

ব্রজহরিঃ মা, আজ থেকে আমি কাজে বের হব। আমি কাজ করব। যে কাজ পাব, সেইই কাজই করব। আর আমি ঘরে বসে থাকব না।

মিলি বেশ অবাক হল তবে বাধা দিল না। উৎসাহ দিয়ে বলল “ঠিক আছে বাবা যাও, তবে সাবধানে কাজ করো। বয়স তো হয়েছে, তাইই।”

ব্রজহরি কি যেন একটু ভেবে মিলির পাশে এসে বসল, বলল “মা, তোকে একটা কথা বলব। কথাটা মনে রাখিস। তুই তোর দিদিমণিকে বলিস না যে তুই তাকে চিনতে পেরেছিস?”

মিলিঃ কেন বাবা?

ব্রজহরিঃ উপেনবাবুর সম্মানের দিকে চেয়েই আমার অপু সব জেনে শুনেও চুপ রয়েছে। সঠিক সময়ে সেইই সব খুলে বলবে।

মিলিঃ এমনটা কেন বাবা?

ব্রজহরিঃ যেদিন আমাদের খারাপ সময় ছিল সেদিন কেউ কাছে এল না। উপেনবাবু হয়তো না জেনেই আমার উপকার করেছেন। কিন্তু এখন লোক বলতে পারে ব্রজহরির মেয়েকে উপেন রায় চুরি করেছিল। সেদিন যদি অপু নদীতে পড়ে মরে যেত তবে কেউ ফিরেও তাকাত না। কিন্তু আজ অনেকেই উপেনবাবুর কথার বিশ্বাস করবে না। আর সত্যি বলতে, আমিও তো জানিনা উপেনবাবু কিভাবে অপুকে পেল। তাই তুই দিদির কাছে অচেনাই থাকিস মা। আমার অপুই সময়ে সব ঠিক করবে।

মিলির কাছে কথাটা সঠিক লাগল সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

ব্রজহরি রুগ্ন পায়ে, গামছা কাঁধে, ধীর পারে কাজের খোঁজে বাজারেই দিকে পা বাড়াল। ব্রজহরি বেড়িয়ে যেতেই ব্রজবাসী মিলিকে কাছে ডাকল। বলল “মা, তুই কি একটা কাজ করবি আমার জন্য।”

মিলিঃ কি কাজ মা?

ব্রজবাসী মাথা নিচু করে বলল “যখন আবার তোর দিদি সাথে দেখা হবে, আমার হয়ে তার দুটি পা ছুঁয়ে তাকে প্রণাম করিস মা।”

মিলি মাকে জড়িয়ে ধরে বলল “এ কি তুমি বলছ মা?”

সজল নয়নে ব্রজবাসী বলল “আমার বেদনা তুই বুঝবি না মা।” এই বলে সে পুরানো সব ইতিহাস মিলিকে খুলে বলতে লাগল। কিভাবে ব্রজহরির প্রথম বৌ মারা গেল? কোথায় তাকে নদীতে ভাসান হল? এই শিশু অপুর উপর ব্রসবাসী কিভাবে কত যাতনা দিয়েছে? কেন সেদিন অপু জলের ঘাটে জল আনতে গিয়েছিল আর তখন কি হয়ে থাকতে পারে?

ব্রজবাসী আজ আর কিছুই লুকিয়ে রাখল না। সব জেনে মিলি যেন লাজে, দুঃখে, অপমানে, যন্ত্রণায় পাথরের মতই হয়ে গেল। দিদিকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ তার মনে গত রাত থেকে যা ছিল, সব মা ‘র কথা শুনে উড়ে গেল। দিদির চোখে আজ সে কিভাবে চোখ রাখবে? মিলি তেমনিই বসে রইল। অনেক বেলা হয়ে গেল সে তেমনি বসে রইল।

ধীরে ধীরে যখন তার মনের ভাব একটু হাল্কা হল সে এক তীব্র টান অনুভব করল দিদির জন্য। সে তার চারিদিকে যেন দিদির শব্দ শুনতে পেল। সে পরি কি মরি হয়ে স্নানাদি সেরে রায় বাড়ির পানে ছুটল। আজ সে দিদিমণির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে না, আজ সে নিজের দিদির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। খুশিতে নিজের খেয়ালেই সে গ্রামের মাটির পথে চলতে লাগল। আর হঠাৎ তার চমক ভাঙ্গল। অপু হেঁটে হেঁটে এদিকেই আসছে, পিছন পিছন নন্দু।

দূর থেকে তার চোখে আজ দিদিকে ঠিক চাঁদ মনে হচ্ছে। নিজের জীবনের চাঁদ। সে এক নতুন চোখে দিদির দিকে তাকিয়ে রইল। দূর থেকে প্রাণ ভরে দেখতে লাগল তার দিদিকে। অপু প্রাণ খোলা হাসি হাসে সমনে এসে দাঁড়াল “অনেক বেলা হল আর তুমি এলে না। তাই আমি নিজেই চলে এসেছি।”

মিলি দিদিকে কি বলবে শব্দ খুঁজে পেল না। হঠাৎ বলল “তুমি এত গুলি টাকা দিলে তাই আমরা এই ক ‘দিন হয়তো পেট ভরে খেতে পারব। এর জন্য তোমাকে একটা প্রণাম করবো, তুমি কিন্তু মানা করতে পারবে না।” বলেই সে দিদির দু ‘পা ধরে দিদির চরণে যেন নিজের দুঃখ, আবেগ, মনের সব জ্বালা-যন্ত্রণা সব সপে দিল।

অপু ছলছল চোখে মিলিকে বুকে জড়িয়ে ধরল, বলল “ হয়েছে, হয়েছে। আর এত কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে না। চল ঐ নদীটার কাছে একটু ঘুরে তবে বাড়ীতে যাব।” এই বলে অপু মিলি কাঁধে হাত রেখে নিজের বোনকে সাথে নিয়ে মা ‘র দিকে পা বাড়াল।

আজ মিলি সব জানে, তার দিদিকেও চিনে। সে মনে মনে আগেই জানে দিদি নদীর কোন জায়গাটায় যাবে? কেন যাবে? মা নদীর যে জায়গাটার কথা আজ সকালে বলেছিল সেখানেই এসে দিদি নদীর পারে দাঁড়াল।

অপু যেন খুব ভাবুক হয়ে তার মা ‘র পানে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরে আনমনা হয়ে একটা ছোট্ট শিশুর মত নদীর জলে হাত রেখে খেলা করতে লাগল। মিলির মনে হল এইতো সে দিনের ছোট্ট অপু।

অপু কয়েকবার নদীর জল মাথায় রাখল, চোখে রাখল। তারপর চকচক চোখে মিলির দিকে তাকিয়ে বলল “ মিলি এখানে আসো। নদীতো আমাদের মা। মা ‘কে একবার প্রণাম করবে?”

মিলির কিছুই বুঝতে বাকী নেই। সে দিদির কথা মতই তার বড়মাকে প্রণাম করল। আজ তার চোখেও যেন এই নদীটা তার বড়মা হয়ে গেল। অপু মিলিকে পাশে রেখে তার মাকে লক্ষ্য করে বলল “মা, এই দেখ আমার ছোটবোন মিলি। আশীর্বাদ করো যেন আমরা সব সময় এক সাথে থাকি।”

কেউ কিছু বুঝুক না বুঝুক, মিলি ঠিক বুঝল দিদি কাকে কি বলছে? কার সম্পর্কে বলছে আর কেন বলছে?

সে আবেগে তার দিদিকে প্রথমবার আপ্রাণ জড়িয়ে ধরল। অপু ও তাকে জড়িয়ে ধরল। মা ‘র স্নেহের ছায়ায় দুবোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে তেমনি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। কেউ কাউকে ছাড়তে চাইল না। চেনা হয়েও দুজনই অচেনা থাকতে চাইল।

মা ‘র কাছ থেকে দুজনের ফিরে আসার সময় মিলি বলল “দিদিমণি কাছেই আমাদের বাড়ি। যাবেন?”

অপু এক গাল হেসে বলল “যাব, তবে আজ নয়। ওটা আমার ছোট বোনের বাড়ি বলে কথা। বেশ সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে। বেশ পাকাপোক্ত ভাবে যেতে হবে।”

দিদির কথার মানে মিলি যেন দিদির চেয়েও ভাল বুঝল।

অপু নন্দুকে বলল “নন্দু আমারা ধীরে ধীরে আসছি। তুমি একটু জলদি যাও। গিয়ে ফাল্গুনীকে বলবে আমাদের জন্য খাবার তৈরী রাখতে। আমরা এসেই খেতে বসে যাব। বড্ড খিদে পেয়েছে।”

নন্দু দ্রুত চলতে শুরু করল।

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717


আগের পর্ব - ১ম পর্ব   ২ য় পর্ব   ৩ য় পর্ব

All Stories     21    22    23    24    (25)     26    27    28    29