Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

সে তবে কে?

বাংলা গোয়েন্দা গল্প
লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

All Bengali Stories    49    50    51    52    53    54    55    (56)     57   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



সে তবে কে?
বাংলা গোয়েন্দা গল্প
লেখক- শান্তনু দাস, হাওড়া, কোলকাতা

পর্ব ৯

আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮   

◕ সে তবে কে?
পর্ব ৯
"হ্যালো কাজটা এবার ফিনিস করে দেওয়া যেতে পারে সুমিলি।"

"আর ইউ রেডি?"

"হ্যাঁ। তবে সাবধানে।"

"যেমন কথা হয়েছে তেমনই কাজ হবে। আমার ছদ্মবেশ চিনতে পারার কথা নয়।"

"তুমি ছাড়া এ কাজটা অন্য কেউ করতে পারত না সুমিলি। ওকে, জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।"

এদিকে ইন্দ্রদা আমাদের ফোনে বলল সচেতন থাকতে; ও ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে। হাত কয়েক দূরে অন্ধকারে মনে হল কেউ যেন নড়ে উঠলো। আমার কান খাঁড়া হয়ে গেছে। ইন্সপেক্টরের চোখদুটো সজাগ। ঘড়ি বলছে সাড়ে তিনটে। আমরা ঝাউগাছের আরো আড়ালে চলে গেলাম। কালো কোট টুপি পরা একটা লোক ছুটতে-ছুটতে খুব সাবধানে অলীকদের ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে গেল। আমরাও খুব সাবধানে ওকে ফলো করতে থাকলাম। কিন্তু লোকটা আমাদের মতই আর একটা ঝাউগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে চারপাশে কি যেন লক্ষ্য করছে। আমরা পা টিপে-টিপে ওর পেছনে এসে দাঁড়ালাম। ইনস্পেকটর সমাদ্দার লোকটার কাঁধে হাত রাখতেই লোকটা চমকে ঘুরে দাঁড়াল। আমার মুখ দিয়ে একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে এল, "একি তুমি ! রজকদা তুমি এখানে?"

রজক সমাদ্দার কথাটা শোনামাত্রই আমাদের থেকে হাত কয়েক দূরে চলে গেল। অন্ধকারে আর ওকে দেখা গেল না। কালীচরণ বাবু যে অতল রহস্যে তলিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে তা ভালই টের পেলাম। এখানে রজক সমাদ্দারের উপস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। সত্যি বলতে কি, রজকদার চোখের চাহনিতে আমি আজ বিন্দুমাত্র নিরীহতার লেশ খুঁজে পেলাম না।

আমরা ফ্ল্যাটের দরজার সবচেয়ে কাছের ঝাউগাছটায় আত্মগোপন করে রইলাম। এবার হলুদ রঙের দরজার মাথার ওপর একটা আলো জ্বলতেই দেখতে পেলাম বাইরে একটা আরামকেদারা। দরজাটা খুলে গেল। দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন অলীকের মা। দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে সাদা কাপড়ের ঘোমটা কপাল পর্যন্ত নেমে এসেছে। অলীকের মা আরামকেদারাটাতে বসল। তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। নিস্তব্ধ প্রতীক্ষায় সময় পেরোচ্ছে। অন্ধকারে হঠাৎ লক্ষ্য করলে মনে হচ্ছিল, অশরীরীর মত বসে আছে বৃদ্ধা অলীকের মা। এইসময় ইন্দ্রদা কোথায় কে জানে? হয়তো আমাদেরই মত কোনো একটা গাছের আড়ালে আত্মগোপন করে আছে। অলীকের মাকেই খুন করতে খুনি আসবে এটুকু আন্দাজ করতে পারছিলাম। এবার লক্ষ্য করলাম দরজা দিয়ে মুখ বাড়াচ্ছেন সীমন্তিনী সেন। উনি বেড়িয়ে এসে আস্তে-আস্তে আরামকেদারার দিকে এগোতে শুরু করলেন। অলীকের মা ওনাকে দেখতে পান নি। আমি ইন্সপেক্টরের দিকে তাকিয়ে দেখি কোমর থেকে রিভলবারটা ওনার হাতে চলে এসেছে? তার মানে সীমন্তিনী দেবীই কি অলীকের মাকে ...! কিন্তু ওনার হাতে তো কোনো অস্ত্র নেই। সেই মুহূর্তে এতকিছু ভাববার অবকাশ ছিল না। এবার আরো অবাক হলাম দরজা দিয়ে কালো কোট টুপি পরা, চোখে কালো চশমা আর মুখে কালো রুমাল বাঁধা একজনকে বেরোতে দেখে। সে যে রজক সমাদ্দার নয় সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, কারণ রজক অলীকের ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকবে কি করে? ঢোকার তো এই একটাই দরজা। ঢুকলে অবশ্যই আমাদের নজর এড়াতো না। তবে কে সে? সে যে শয়তান তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেল। সীমন্তিনী সেন লোকটাকে খেয়াল করেনি। লোকটা একটা রুমালে ক্লোরোফর্ম ঢেলে পেছন থেকে সীমন্তিনী সেনকে অজ্ঞান করতে চাইল। ইনস্পেক্টর সমাদ্দার এবার রিভলবার হাতে আড়াল থেকে বেড়িয়ে গর্জে উঠলেন, "ইওর গেম ইজ আপ। ছেড়ে দিন সীমন্তিনী দেবীকে। আর একটু চালাকির চেষ্টা করলে গুলি চালিয়ে দেবো।" আমিও আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসেছি। ঐ মুহূর্তে সীমন্তিনী দেবী আমাদের দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। উনি ছুটে এলেন। "আমাকে বাঁচান, আমাকে প্লিজ বাঁচান ইনস্পেকটর। ঐ লোকটা ... ঐ লোকটা আমাকে মেরে ফেলতে চায়।"

অলীকের মা দেখলাম একপাশে দাঁড়িয়ে; কোনো কথা বলছে না। ইন্দ্রদাই বা কোথায় ভগবান জানে? ইনস্পেকটর আবার হুঙ্কার ছাড়লেন কালো কোট টুপি পরা লোকটার দিকে তাকিয়ে। "হ্যান্ডস আপ। একদম নড়ার চেষ্টা করবেন না।"

গোলমাল শুনে দেখলাম সমীরণ সেনও বাইরে বেড়িয়ে এসেছেন। এবার ইন্দ্রদার গলা শোনা গেল, "কালীচরণ বাবু, টুপি আর মুখের রুমাল আর চশমাটা খুললেই দেখতে পাবেন লোকটা কে?" ইন্দ্রদার গলা হঠাৎ কোথা থেকে ভেসে এল বুঝতে পারলাম না। অলীকের মায়ের ঘোমটাটা তখন খুলে গেছে। তার মানে ইন্দ্রদাই এতক্ষণ বুড়ি সেজে অভিনয় করে যাচ্ছিল। সবাই অবাক দৃষ্টিতে ইন্দ্রদার দিকে তাকিয়ে আছে।

"অবাক হবার কিছুই নেই। খুনিকে ধরতে এটুকু অ্যাকটিং-এর প্রয়োজন ছিল আমার," সাদা কাপড়টা খুলতে খুলতে ইন্দ্রদা বলল, "চিন্তার কোনো কারণ নেই সীমন্তিনী দেবী, আপনার মা এখন ঘরে ঘুমোচ্ছেন। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি। ইনস্পেকটর সমাদ্দার এই ছদ্মবেশীর ছদ্মবেশ উন্মোচনের ব্যবস্থা করুন।"

ইনস্পেকটর লোকটার কালো চশমা আর রুমালটা মুখ থেকে খুলে দিল। মুখটা চেনা চেনা লাগছে। এবার টুপিটা খুলে দিতেই একরাশ কালো ঘন চুল কাঁধের ওপর লুটিয়ে পড়ল। অবাক বিস্ময়ে সীমন্তিনী সেন বলে উঠলেন, "একি সুমিলি তুমি ! তুমিই তাহলে ... কিন্তু কেন?"

সুমিলি মাথা নিচু করে আছে। বিস্ময়ে ইন্সপেক্টরের গলার স্বর আস্তে হয়ে গেছে, "সুমিলি, তুমিই তাহলে অলীককে আর প্রমিলাকে ...ওহ মাই গড, আই কান্ট বিলিভ দিস।"

ইন্দ্রদা চলে এসেছে, "আর দেরি কেন, এবার গ্রেফতার করুন অলীক আর প্রমিলার হত্যাকারীকে, হাতকড়া নিয়ে এসেছেন তো?"

"সুমিলি আমি তোমাকে প্রথম দিন থেকেই সন্দেহ করেছিলাম। তোমার এই নিষ্পাপ মুখটার আড়ালে যে এতটা পৈশাচিক চেহারা রয়েছে তা আমার কল্পনাতীত। তুমিই আমাকে সেই রাতে ফোন করে বলেছিলে স্কটিশ চার্চ হোস্টেলে একটা খুন হবে, তাই না?"

"হ্যাঁ!" সুমিলি ঘাড় না তুলেই জবাব দিল।

"তোমাকে দু-দুটো খুনের অপরাধে আমি গ্রেফতার করতে বাধ্য হচ্ছি। হাবিলদার হাতকড়াটা দাও।"

ইন্দ্রদা হাসতে-হাসতে বলল, "একি ! কি ভুল করতে চলেছেন সমাদ্দার মশাই। সুমিলি খুনি আপনাকে কে বলল? ও তো জাস্ট ছদ্মবেশী। আপনার ছেলেকে একবার ডাকুন সমাদ্দার বাবু। আচ্ছা ওয়েট, আমিই ডাকছি। রজক ... রজক এদিকে এসো।"

রজক সমাদ্দার সেই কালো কোট টুপি পরা অবস্থায় এগিয়ে এল। ততক্ষণে কোলকাতা থেকে হোস্টেল সুপার সৌমেন চক্রবর্তী ও তার ছেলে সুমিতও এসে হাজির হয়েছে। ইন্দ্রদা আবার শুরু করল, "খুনির বিরুদ্ধে প্রমাণের অভাব ছিল না। কিন্তু এমনই এক নাটকীয় পরিস্থিতির মাধ্যমে নাটকটা শেষ করতে চেয়েছিলাম আমি। তার জন্য অবশ্য ধন্যবাদ প্রাপ্য সুমিলি আর রজকের। অসাধারণ ড্রামাটিক পারফরমেন্স।"

ইনস্পেক্টরের আর আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছিল, "কি বলতে চাইছেন বলুন তো ইন্দ্রজিৎ বাবু! আসল খুনি কই?"

"অলীক সেন ও প্রমিলাকে হত্যার অপরাধে আপনি অ্যারেস্ট করুন আপনার পাশে ভদ্রবেশে নিঃসংকোচে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ওকে ..."

ইন্দ্রদার শেষ কথাটা বলার সাথে-সাথেই বিস্ময়ে কেঁপে উঠলাম।

"কি বলছেন আপনি? আমি খুন করেছি? আপনি কি ভুল বকছেন?"

"ইন্দ্রজিৎ সান্যাল যেমন ভুল কথা বলে না, তেমনই প্রমাণ ছাড়া এক পা এগোয় না। গল্পটা এবার আপনিই বলবেন তো নাকি?"

"হোয়াট ননসেন্স ! নিজের মত একটা গাল গল্প বানিয়ে নিলেই হল নাকি?"

"তাহলে গাল-গল্পটা একটু শুনেই দেখা যাক। কি বলেন ইনস্পেক্টর সমাদ্দার বাবু? অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধি খেলে অলীককে খুন করা হয়েছিল যাতে খুনির ওপর এতটুকু সন্দেহ না পড়ে। তবে সেই রাত্রে হোস্টেলে খুন হবে এই বলে কালীচরণ বাবুকে ফোন করেছিল সুমিলিই।"

ইনস্পেকটর বললেন, "তার মানে শোনার ভুল হয়নি আমার?"

"একদমই না। আমি কাল রাতে তমলুকে সুমিলির আত্মীয়ের বাড়িতে যাই। সুমিলি আমাকে সব খুলে বলে। খুনিকে ধরতে ওকে অভিনয় আমিই করতে বলেছিলাম। সুমিলি আপনাকে ফোন করার আগে খুনির কাছ থেকে একটি বেনামি হুমকি চিঠি পেয়েছিল যেখানে সুমিলিকে জোর করে আপনাকে ফোন করতে বলা হয়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুমিলিকে দিয়ে ফোন করিয়ে নিজে খুন করার উদ্দেশ্যটা কি? কারণ, হীরা সাসপেন্সের বাইরে থাকলেও যাতে খুনির ওপর কোনোরকম সন্দেহ না পড়তে পারে, সমস্ত সন্দেহ যাতে সুমিলির ওপর গিয়ে পড়ে। সুমিলি অবশ্য তখনও জানতো না চিঠিটা কে ওকে পাঠিয়েছে, প্রাণ সংশয়ের ভয়ে সুমিলি পুলিশকে কিছু জানাতে পারে নি।"

দাঁত খিঁচিয়ে ভদ্রবেশী খুনি বলে উঠল, "আপনারা সবাই কি এখানে ডিটেকটিভ গল্প শুনতে এসেছেন? ইন্দ্রজিৎ বাবু আপনি কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেন।"

সুমিলি ইন্দ্রদার পাশে চলে এসেছে। ইন্দ্রদার চাবুকের মত রিপ্লাই এল, "সাট আপ। গল্পটা যখন আমি শুরু করেছি সেটা আমিই শেষ করবো, সেটা গাল-গল্প হলেও শুনতে হবে। বাই-দা বাই, খুনি কিন্তু খুব ভালো করে জানতো ঐদিন রাতে হোস্টেলে তেমন কোনো স্টুডেন্ট থাকবে না। হীরার সঙ্গে ঝগড়ার কথাটাও খুনির অজানা ছিল না। খুনি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল হীরা ঐ রাতে অলীকের হোস্টেলে অলীককে ভয় দেখাতে যাবে। কিন্তু সিওর ছিল না হীরা অলীককে খুন করতে পারবে কিনা। এদিকে অলীককে সেই রাতে খুন করার মত সুযোগ আর কোনোদিন আসবে না। তাই, কি হয়েছিল সবাই মন দিয়ে শুনুন। হীরা রিভলবার নিয়ে অলীকের হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিল, আর খুনি হীরাকে ফলো করছিল। পরনে ছিল কালো কোট টুপি, মুখে নকল গোঁফ দাড়ি। হীরা কতদূর কি করতে পারবে সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকায় খুনি নিজে অলীককে খুন করে হীরাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল। বৃষ্টি পড়ছিল সেই রাতে। নাইটগার্ড ভীমুও হোস্টেলের বাইরে পাহারায় ছিল। খুনির হাতে তখন গ্লাভস ছিল না, কারণ গ্লাভস পড়লে রাস্তায় যে কেউ খুনিকে সন্দেহ করতো। তাই ভীমুর লাঠিটার ফিঙ্গার প্রিন্টের সাথে খুনির হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলে গেছে। এরপর খুনি যখন হোস্টেলে ঢোকে তখন হীরা অলীকের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল। হীরাকে কৌশলে পেছন দিক থেকে অজ্ঞান করে হীরারই রিভলবার দিয়ে অলীককে খুন করে আবার হীরারই হাতে রিভলবার গুঁজে চলে যায় খুনি। সেই মুহূর্তে গ্লাভস পড়েছিল বলে রিভলবারে কোনো ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি খুনির। কাল রাতে সুমিলিদের বাড়ি গিয়েই নাটকের প্ল্যানটা করেছিলাম। কথা হয়েছিল আমি ছদ্মবেশে অলীকের মা সেজে বসে থাকবো আরামকেদারায়। আর খুনি যখন অলীকের মাকে খুন করতে আসবে তখন সুমিলি কালো কোট টুপি পরে রেডি থাকবে ও খুনিকে অজ্ঞান করে দেবে পেছন থেকে। তার আগেই অবশ্য ইনস্পেকটর সমাদ্দার রিভলবার নিয়ে এগিয়ে আসেন। উনি ভেবেছিলেন সুমিলিই খুনি, কিন্তু প্রত্যেক খুনেরই তো কিছু একটা মোটিভ থাকবে। সুমিলি রিয়েলি লাভড অলীক, সেটা বারবার ও আমাকে বলেছে। সো প্যাথেটিক।"

সুমিলির নিস্পলক চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে; খুনির দিকে অগ্নিচক্ষে তাকিয়ে থাকে সে। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে খুনি বলে ওঠে, "আপনি কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন ইন্দ্রজিৎ বাবু আমি অলীকের ..."

"আপনি অলীকের বৌদি নন মিসেস সীমন্তিনী সেন। একজন অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথার, চরম চালবাজ, লোভী হত্যাকারী। সম্পত্তির লোভে অলীককে রাস্তা থেকে সরিয়ে মাকে উইল তৈরি করার আগেই আজ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সীমন্তিনী সেন ওরফে সুমি বৌদি। অলীক আপনাকে সুমি বৌদি বলেই ডাকতো, তাই না? অলীক মৃত্যুর আগে সুমি মানে ওর বৌদিকেই বোঝাতে চেয়েছিল। আমি অলীকের হোস্টেলের রুমে গ্রিটিংস কার্ডগুলো নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখি একটা কার্ড আপনি অলীককে পাঠিয়েছিলেন, তাতে লেখা ছিল সুমি বৌদি। এরপরেও আপনি কোনো কথা বলবেন মিসেস সেন?"

"আপনি কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন আমি ঐদিন তমলুক ফিরে এসেছিলাম, রজককে জিজ্ঞেস করুন, সুমিলিকে জিজ্ঞেস করুন, তাহলে আমি হোস্টেলে গিয়ে খুনটা করলাম কখন? আপনাদের কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।" সীমন্তিনী সেনের গলা কেঁপে উঠেছে।

"কোথাও ভুল হচ্ছে না মিসেস সেন। আপনি কোলকাতাতেই ছিলেন, আপনার বাবার বাড়িতে। আপনার বাবার বাড়িতে ফোন করে সেটা ইন্দ্রজিৎ সান্যাল জানতে পারে তা আশা করেননি তো?"

সমীরণ সেন একপাশে কাঠের মত দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ইনস্পেকটর ওনার উদ্দেশ্যে বললেন, "সরি মিস্টার সমীরণ সেন, আপনার মুখোশধারী স্ত্রীটিকে আপনি চিনতে পারেন নি। মিসেস সেনকে অলীক সেন এবং প্রমিলা দেবীকে হত্যার অপরাধে আমি গ্রেফতার করলাম।"

সীমন্তিনী সেন আবার চেঁচিয়ে উঠলেন, "এক মিনিট ইনস্পেক্টর! আমি ইন্দ্রজিৎ বাবুর কাছে জানতে চাই প্রমিলাকে যদি আমিই খুন করে থাকি তাহলে আমাকে অজ্ঞান করলো কে? জবাব দিন মিস্টার সান্যাল?"

"এই গল্পটাও আমার কাছে শুনবেন? নাকি আমার বুদ্ধির পরীক্ষা নিচ্ছেন মিসেস সেন? আমি তো জানতাম আপনি শুধু বানিয়ে ভালো গল্প বলতে পারেন, গল্প শুনতে ভালোবাসেন জানা ছিল না তো। একটা কথা আছে জানেন তো, কোনো মার্ডার কখনও পারফেক্ট মার্ডার হয় না। খুনি কিছু না কিছু ক্লু ফেলেই যায়। তাহলে সেদিন ভোরের গল্পটাই বলি। রোজগার নিয়ম মত অলীকের বৃদ্ধা মা আরামকেদারায় এসে বসেছেন। সীমন্তিনী সেন তখনই ওনাকে খুন করতে আসেন। কিন্তু সেটা দেখে নিয়েছিল বা বুঝে গিয়েছিল প্রমিলা। সীমন্তিনী সেনই কালো চাদর জড়িয়ে অলীকের মায়ের কাছে এসে দাঁড়ান। অলীকের মা ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। প্রমিলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল। সেই মুহূর্তে সীমন্তিনী সেন নিজের গলার মোটা রুপোর হারটা দিয়ে প্রমিলার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। তারপর খুব সাবধানে ক্লোরোফর্ম শিশি থেকে রুমালে ক্লোরোফর্ম ঢালেন। শিশিটা দূরে ছুঁড়ে ফেলেন ঝাউগাছের দিকে। তারপর নিজেই রুমাল নাকে চেপে ধরে অজ্ঞান হয়ে যান। অবশ্য সেটা করার আগে উনি দুবার 'বাঁচাও বাঁচাও' বলে চিৎকার করে ওঠেন। তারপর জ্ঞান ফিরলে খুব সুন্দর ভাবে একটা মিথ্যে গল্প বলেন আমাদের। আমি যেদিন কোলকাতা ফিরবো বলে অলীকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছি, তখন ঝাউগাছের কাছে ক্লোরোফর্মের শিশিটা পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। সন্দেহ তখনই হয়েছিল যখন মিসেস সেনের মুখের উপর সাদা রুমালটা পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। খুনি কি ওনাকে অজ্ঞান করার পর বোকার মত রুমালটা ফেলে চলে যাবে? অভিনয়টা হালকা -হালকা অনুমান করতে পেরেছিলাম। তাই কোলকাতায় এসে ক্লোরোফর্ম শিশির গায়ের ফিঙ্গার প্রিন্ট চেক করে দেখি সেটা ভীমুর লাঠির ফিঙ্গার প্রিন্টের সাথে হুবহু মিলে গেছে। বুঝতে বাকি ছিল না অলীককে যে খুন করেছে সেই তমলুকে অলীকের বাড়িতে প্রমিলাকে খুন করেছে। তখনও সিওর ছিলাম না খুনি মিসেস সেন কিনা। কিন্তু কাল রাতে রজক আমার কথা অনুযায়ী অলীকদের বাড়ি যায় নিজের ডায়রি নেবার নাম করে। মিসেস সেন রজককে কাঁচের গ্লাসে জল এনে দিয়েছিলেন। তারপর ওনার অলক্ষ্যে জলটা অন্য কাঁচের গ্লাসে ভরে টেবিলে রেখে সেই গ্লাসটা নিয়ে রজক পালিয়ে আসে। আর তাতেই মিসেস সেনের ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, রজক মিসেস সেনের অলক্ষ্যে অলীকের মায়ের ঘরে ঢুকে ওনার জল খাবার গ্লাসে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দিয়ে চলে আসে, যাতে আজ ভোরে জল খাবার পর অলীকের মা ঘুম থেকে না উঠে আবার শুয়ে পড়েন। আর বাকি কাজটা করতে আমার কোনো অসুবিধেই ছিল না। আশা করি গালগল্পটা বোঝাতে পেরেছি আপনাকে মিসেস সীমন্তিনী সেন? আপনার ওপর আমার সন্দেহটা প্রকট হয় আপনাদের বাড়ি তমলুক গিয়েই। সেখানে রাতে আমাদের দোতলার ঘরে কেউ হুমকি চিঠি ছুঁড়েছিল। তাতে নিচে হীরা নাম লেখা ছিল ঠিকই কিন্তু চিঠিটা আপনিই লিখেছিলেন সে বিষয়েও আমি নিশ্চিত। মনে আছে, আপনি আপনার বাবার বাড়ির নম্বর, নাম, ঠিকানা একটা কাগজে লিখে দিয়েছিলেন? সেই হাতের লেখার সাথে চিঠির লেখার মিল ছিল স্পষ্ট। সেটা অবশ্য হ্যান্ডরাইটার এক্সপার্টের কাছে পাঠানো হয়েছে, উনি আরো ভাল এক্সপ্লেন করতে পারবেন। কালীচরণ বাবু এবার আপনার যা করণীয় করে ফেলুন। আমাকে সৌম্যকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। ধন্যবাদ সকলকে।"

ফেরার সময় ইন্দ্রদার মুখে সেই অতি পরিচিত তৃপ্তির হাসিটা দেখে আমার মনটা খুশিতে ভরে গেল। সেই হাসির মধ্যে নেই কোনো ওভার কনফিডেন্সের ছোঁয়া, আছে শুধু অলীক সেন মৃত্যু রহস্যের যবনিকা পতন করে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস। "সৌম্য তুই বাড়ি যা, আমাকে একবার হেদুয়ায় নামতে হবে।"

"আবার স্কটিশ চার্চের হোস্টেলে?"

"না, পার্কে। এবার অলীক নয়, ঝিলিক। মিস ঝিলিক সেনগুপ্ত।"
( সমাপ্ত )


আগের পর্ব গুলি: পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮   

অন্যান্য গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস:
নয়নবুধী   
কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত    
মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   
প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য   
লুকানো চিঠির রহস্য   
একা বড়ো একা   



All Bengali Stories    50    51    52    53    54    55    (56)     57   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717