All Bengali Stories
124
125
126
127
128
129
130
(131)
132
133
-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ 'নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার - মে, ২০২৪' স্বরচিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা, ( প্রতি বছর মে মাসে )
Result
--------------------------
◕
দত্তক-কন্যা - পর্ব ৩
বাংলা গল্প
লেখিকা - ডাঃ অনামিকা সরকার, বাবা - রামনাথ নস্কর, রামকৃষ্ণ পল্লী, নরেন্দ্রপুর, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
অন্য পর্বগুলিঃ
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
##
দত্তক-কন্যা - পর্ব ৩
কয়েকটা দিন বেশ ভালোই কাটল। জয়াদি আর জয়িতাকে বেশ পছন্দ হয়েছে সৌমীর। বেশ সহজ, সরল, মিষ্টি স্বভাবের। ওরা একদিন সৌমীকে দীঘা বেড়াতে নিয়ে গেল। বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয়, বাসে করেই গেল ওরা। সমুদ্র দেখে সৌমী একেবারে উচ্ছ্বসিত। লক্ষ্ণৌয়ের মেয়ে ও, জীবনে একবারই সমুদ্র দেখেছিল বারো বছর বয়সে বাবা-মায়ের সাথে, মুম্বাইতে। বাড়ির এত কাছে যে সমুদ্র থাকতে পারে, ও ভাবতেই পারেনি। সমুদ্রের ঢেউয়ে হুটোপুটি করে, হোটেলে খেয়ে সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরেছিল ওরা। দিনটা ওর মনের মণিকোঠায় চিরকালই উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
এর সপ্তাহ খানেক বাদে জয়িতা কলকাতায় চলে গেল। ও কলকাতার হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে, গরমের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল। জয়া তো আগেই চলে গিয়েছিল। ও দীঘার যে হোটেলে রিসেপশনিস্টের কাজ করে, তার ম্যানেজারকে বলে দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিল, বোনের সাথে দেখা করতে। বাড়িটাতে সৌমী প্রায় একা হয়ে পড়ল। অবশ্য বড় আর মেজোদিদি, জবা ওরফে সৌমীর ফিরে আসার খবর পেয়ে একদিন বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে ওকে দেখতে এসেছিল। তবে তারাও দুদিন বাপের বাড়িতে কাটিয়ে আবার যে-যার শ্বশুরবাড়ি চলে গেল। সৌমী আবার একা হয়ে পড়ল।
যদিও জয়ন্ত বাড়িতেই বাবা-মায়ের সাথে থাকে, তবে সে আর কতক্ষণ? সারাক্ষণই তো বাইরে-বাইরে ঘুরছে, শুধু দুপুরে আর রাতে খাওয়ার সময়ই বাড়ি ঢোকে। আর ওকে একদম পছন্দও হয়নি সৌমীর। কেমন অদ্ভুত সাজ-পোশাক; এক কানে দুল, মাথার সামনের দিকে বড়-বড় চুল গোলাপি হাইলাইটস করা। রাত্রিবেলা বাড়ি ঢুকলেই মুখ থেকে মদের গন্ধ বের হয়। আর কথায়-কথায় গালিগালাজ তো আছেই। সৌমী তাই পারতপক্ষে ওকে এড়িয়েই চলে।
দিনগুলো যেন কাটতেই চায় না সৌমীর। থেকে-থেকে কেবলই মনে পড়ে মামণি-পাপার কথা, লক্ষ্ণৌয়ের বাড়ির কথা, বন্ধুবান্ধবদের কথা। ইচ্ছে করে এক দৌড়ে গিয়ে পাপাকে জড়িয়ে ধরে, মামণিকে চুমু খায়। আবার পরক্ষণেই মনকে শক্ত করে নেয় ও। ফেলে আসা জীবনে আর ফিরতে চায় না ও। নিজের রক্তের সম্পর্কের লোকজনের সাথেই কাটাতে চায় বাকি জীবনটা। কখনো কখনো মনে হয় ফোনটা সাথে করে আনলে খুব ভালো হতো। স্যারের সাথে কিছু আলোচনা করা যেত। গবেষণার কাজটা অনেকদিন থেমে আছে।
সেদিন রাতে খেতে বসে বাবা বললেন, "জয়ার বিয়ের জন্য এক জায়গায় কথাবার্তা চলছে। পাত্রপক্ষ অবস্থাপন্ন, ছেলেটি পঞ্চায়েত দপ্তরে চাকরি করে। কিন্তু অনেক টাকা দাবি করছে, কি যে করি!"
সৌমী চুপচাপ মাথা নিচু করে খেতে লাগলো। বাবা আবার বললেন, "হ্যাঁ রে জবা, তোর পাপা তো শুনছি বেশ বড়লোক। ওনাকে বললে কিছু সাহায্য করবে না?"
সৌমী মিনিট খানেক 'হাঁ' করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কথাটার মানে অনুধাবন করার জন্য। তারপর বলল, "পাপা তেমন বড়লোক নয়, একটা ছোট-খাটো কাপড়ের দোকান আছে লক্ষ্ণৌতে। কিন্তু পাপার কাছে তো আমি চাইতে পারবো না।"
"হুঁ। আর একখানা রুটি দাও সবিতা," বলে গম্ভীর হয়ে বাবা আবার খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করলেন।
পরদিন সকালে ব্যাগ থেকে চেক বই বের করে একটা চেকে সই করে সৌমী বাবার দিকে বাড়িয়ে ধরল, "এটা ধরো বাবা, এক লাখ টাকার চেক।"
বাবা খানিক অবাক হয়ে বললেন, "তবে যে বললি..."
"এটা আমার নিজের টাকা। আমি PhD করছি তো, তাই কিছু টাকা স্টাইপেণ্ড পাই।"
"কিন্তু তোর টাকা নিলে..."
"অসুবিধা হবে না বাবা। পাপাকে কোনোদিন সংসার চালানোয় সাহায্য করতে হয়নি, আমার টাকা আমার অ্যাকাউন্টেই থেকে যায়। তুমি নাও।"
"ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তোমার মঙ্গল করুন।"
উঠোনে দাঁড়িয়ে দাঁতন করছিল জয়ন্ত। সৌমীর দিকে তাকিয়ে বলল, "জবাদি, তুমি তো দেখছি বেশ বড়লোক।"
উত্তরে সৌমী শুধু হাসল।
#
সপ্তাহ খানেক বাদে বাড়িতে খুবই অশান্তি। জয়ন্তর কোন্ বন্ধু নাকি একখানা বাইক কিনেছে, তাই জয়ন্তরও এখনই একটা বাইক চাই। না হলে নাকি তার প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে একেবারে চুপসে যাবে। মা বললেন, "আশি হাজার? অত টাকা দিতি হবে? তোর বাপের কাছে বল।"
জয়ন্ত বাবাকে গিয়ে বলল, "সেজদির বিয়ের জন্য জবাদি যে এক লাখ টাকার চেক দিয়েছিল, সেখান থেকে আমাকে আশি হাজার দাও। আচ্ছা, না হয় সত্তর হাজারই দাও, বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেব।"
বাবা বললেন, "তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? ওই টাকাটা দিলে জয়ার বিয়ের কি হবে?"
"ওসব জানি না, টাকা আমাকে দিতেই হবে। আর না দিলে ফল খুব খারাপ হবে," হুমকি দিয়ে ডানহাত বাড়িয়ে সাইকেলটা টেনে নিয়ে জয়ন্ত বেরিয়ে গেল। মা পিছন-পিছন "বাবু শোন্ শোন্" বলে দৌড় লাগালেন, কিন্তু বাবু ততক্ষণে হাওয়া।
সত্যি সত্যিই দুদিন পরে অশান্তি চরমে উঠলো। টাকা না পেয়ে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো জয়ন্ত। বাবা সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, "এখন কুড়ি হাজার টাকা দিচ্ছি। আর মাসে-মাসে অল্প-অল্প কিছু দেবো'খন। একটা সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইকই না হয় আপাতত..."
তার কথা শেষ হল না, জয়ন্ত চিৎকার করে উঠলো, "কি? সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কিনবো? আমি? ভালোয়-ভালোয় টাকাটা দেবে তো দাও, তা নইলে সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে বুলেট বাইক কিনবো," বলেই সে ছুটে গিয়ে বারান্দার একপাশে রাখা সাইকেলটা তুলে নিয়ে উঠোনে সজোরে আছাড় মারল।
"করিস কি? করিস কি?" বলে মা বাবা দৌড়ে আসলেন।
"আমার মাথায় খুন চেপে গেছে। সরে যাও, নাহলে রক্তা-রক্তি কাণ্ড ঘটে যাবে," বাবা-মাকে এক ঝটকায় ঠেলে সরিয়ে দিয়ে সে ঘরে ঢুকল। বুড়ো বয়সে ধাক্কা সামলাতে না পেরে তারা দু'জন দুদিকে ছিটকে পড়লেন। ঘরে ঢুকেই জয়ন্ত দু'হাত দিয়ে টেবিলের উপরে রাখা ছোট টিভিটা উঁচু করে তুলে আছাড় মারতে উদ্যত হল। ঘরে বসে এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে চুপচাপ সবকিছু দেখছিল সৌমী। এবার সে এগিয়ে এসে টিভিটা ধরে বলল, "এটা রাখ্ ভাই, ভেঙে যাবে।"
"আমাদের জিনিস আমি ভাঙবো, তাতে তোমার কি?"
"জয়ন্ত!!"
"তোমার তো অনেক টাকা জবাদি, আমাকে একখানা বাইক কিনে দাও না।"
"টাকাটা কষ্ট করে ইনকাম করতে হয় ভাই। এমনি-এমনি কেউ আমাকে দেয় না।"
"জানতাম দেবে না, শুধু মুখে বড়-বড় কথা।" টিভিটা নামিয়ে রেখে দুম-দুম করে পা ফেলে বাড়ির বাইরে চলে গেল জয়ন্ত।
সৌমী ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এলো, মাটিতে উবু হয়ে বাবা মায়ের পাশে বসলো। তারা তখনো কেঁদে চলেছেন। মা সৌমীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে-কাঁদতে বললেন, "জবা রে, ছেলেটা সকাল থেকে কিছু না খেয়ে, রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।"
"চিন্তা কোরো না মা, ও ঠিক দুপুরে বাড়ি চলে আসবে।"
"তাই যেন হয় ঠাকুর!" মা দু'হাত জড়ো করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালেন।
বাবা খানিক ইতস্তত করে বললেন, "জবা মা, একটা কথা বলবো রাগ করবি না? তোর তো অনেক টাকা আছে, দে না ভাইকে একটা বাইক কিনে?"
"কি বলছ বাবা? ও অন্যায় আবদার করবে, আর আমাদের তাই মেনে নিতে হবে?"
"কি করি বল্? ওই একটাই তো ছেলে! তাই ছোটবেলা থেকেই সব আবদার মিটিয়ে আসছি।"
সৌমী কয়েক সেকেন্ড নীরব থাকলো। তারপর আস্তে-আস্তে বলল, "আমার কাছে আর খুব অল্পই টাকা আছে বাবা; মাত্র তো কয়েক মাস হল স্টাইপেন্ড পাচ্ছি।"
"তাহলে তোর পাপাকে বল্ না, লাখ খানেক টাকা দিক।"
"কি বলছ বাবা? তোমাকে তো আগেও বলেছি পাপার কাছ থেকে টাকা চাইতে পারবো না। আমি সব ছেড়ে চলে এসেছি।"
মহাদেববাবুর চোয়াল ঈষৎ শক্ত হল। কঠিন গলায় তিনি বললেন, "তাই বললে কি হয় জবা? সোমত্ত মেয়ে, বিয়ের বয়স হয়েছে, এখন আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়ে হাত ধুয়ে নিলে তো ওনার চলবে না। বলি তোর বিয়ের খরচটা কে দেবে শুনি?"
সৌমী হাঁ করে কয়েক সেকেন্ড বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো; তারপর বলল, "আমার বিয়ের জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না বাবা।"
"আর এই যে একমাস ধরে এ বাড়িতে থাকছিস, খাচ্ছিস, তার খরচ কে দেবে? আমার সংসার খরচ কত বেড়ে গেছে জানিস?"
বিশাল এক সুনামির ধাক্কায় সৌমীর হৃদয়টা যেন ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেল। ও কেবল অস্ফুটে বলল, "বাবা!"
মা এতক্ষণে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলেন, "চুপ করো, চুপ করো তোমরা দু'জন।"
বাবা সেকথা গ্রাহ্য না করে বলতে লাগলেন, "আর তুই ফিরে আসাতে আমরা লোকজনের কাছে কত অপমানিত হচ্ছি তা জানিস? যে মেয়ে দু'মাস বয়সে মারা গেছে বলে লোকজনের কাছে প্রচার করেছিলাম, সে আবার ২৪ বছর বয়সে ফিরে এসেছে! গ্রামের সবাই আমাদের ছিঃ ছিঃ করছে। বিশ্বাস না হয় তোর মাকে জিজ্ঞেস কর।"
সৌমীর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো। বলল, "কিন্তু এতে আমার দোষ কোথায় বাবা?"
"কারোর দোষ নয়, দোষ আমার অদৃষ্টের। মরা মেয়ে ফিরে এলো, এখন তার হ্যাপা সামলাও," বলতে-বলতে বাবা উঠে বারান্দা থেকে নেমে বাগানের দিকে চলে গেলেন। আর সৌমী উঠে গিয়ে ঘরের তক্তাপোষের উপরে উপুড় হয়ে পড়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
Next Part
All Bengali Stories
124
125
126
127
128
129
130
(131)
132
133
## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers.
The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation.
Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##
◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717