Home   |   About   |   Terms   |   Library   |   Contact    
A platform for writers

শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৬

বাংলা গল্প

All Bengali Stories    116    117    118    119    120    121    122    123    (124)     125    126   

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------



শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৬
বাংলা গল্প
স্বরচিত গল্প প্রতিযোগিতার ( নগেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার , ২০২১) একটি নির্বাচিত গল্প
Writer: - Dr. Ipsita Bhattacharjee, Sahid Nagar, Dhakuria, Kolkata


অন্য পর্বগুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২    পর্ব ৩    পর্ব ৪    পর্ব ৫    পর্ব ৬    পর্ব ৭    পর্ব ৮    পর্ব ৯    পর্ব ১০    পর্ব ১১    পর্ব ১২   

## শশাঙ্কের শিলমোহর - পর্ব ৬
এক মূহুর্ত দ্বিধা করে সে অটোতে উঠে পড়ল। অটো এগিয়ে গেল পূর্ব দিকে। যাওয়ার সময় জয়ী পিছন ফিরে একবার সেই গলির দিকে তাকাতে আবছা একটা ছায়ামূর্তি দেখতে পেল। সেই গলির শেষ আলোটার নীচে।

"তুমি এতটা নির্বোধ ভাবিনি, "সার্কিট হাউসের বারান্দায় গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললেন অতুলবাবু। ঘটনার আকস্মিকতা বেশ কাবু করেছিল জয়ীকে। কফিটা খেয়ে কিছুটা ঠিক মনে হচ্ছে। সার্কিট হাউসের টানা বারান্দায় দুটি লম্বা ইজিচেয়ারে বসেছিল জয়ী আর অতুলবাবু। দুটো বড় হ্যাঙ্গিং ল্যাম্প ঝুলছে বারান্দার সিলিং থেকে। অতুলবাবুর স্ত্রী সার্কিট হাউসের কেয়ারটেকারকে ডেকে তুলে রাতের খাওয়ারের ব্যবস্থা করছেন। অটোতে থাকতেই অতুলবাবু স্ত্রীকে অনুরোধ করেন, কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে সার্কিট হাউসে চলে আসতে। অতুলবাবুর বাড়ির থেকে নাকি সার্কিট হাউস হেঁটে ২ মিনিট। জয়ীরা পৌঁছানোর পর অতুলবাবুর স্ত্রী খুব যত্ন সহকারে জয়ীকে অভ্যর্থনা করেন। অতুলবাবুর কথার জয়ী কোনও উত্তর দেয় না। আজকের এই ভীষণ রাতের অভিজ্ঞতার পর কোনও রকম ভর্ৎসনার উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা বা ইচ্ছে তার নেই।

অতুলবাবু বলে চললেন, "তুমি কাল কি ফিরছ?"

"উপায় নেই, আমার আইনজীবীকে খবর দিয়েছি। কাল অন্তত এইখান থেকে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। অফিসারের তেমনই নির্দেশ।"

"শেরগিল এই ব্যাপারে কিছু করতে পারে না? আফটার অল, এটা তার রেস্পন্সিবিলিটি..." চেয়ারের উপর নড়ে-চেড়ে বসে উত্তেজিত হয়ে পড়েন অতুলবাবু। জয়ী চেয়ার থেকে উঠে এইবার বারান্দার কার্নিশের কাছে এসে দাড়ায়। কফিতে চুমুক দিয়ে সে বলে, "না অতুলবাবু, কারোরই কোনও দায় নেই। আজকের অভিযান আমার একার, কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর পেতে আমি রজতবাবুর কাছে আসি। তারপর..."

খানিকক্ষণ সব চুপ। সার্কিট হাউসটা খুবই নিরিবিলি এলাকায়, দূরে কোথাও যেন কুকুরের ডাকে কুহকের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হচ্ছে। তারপরেই একটি মমতা মিশ্রিত স্বর শোনা যায়, "কঠিন আলোচনাগুলো খাবার পড়ে হোক বরং.."

পিছন ফিরে জয়ী দেখে অতুলবাবুর স্ত্রী মীরাদেবী কেয়ারটেকারটিকে সঙ্গে করে একটি বড় ট্রেতে খাবার নিয়ে এসেছেন। খাবার দেখে জয়ীর হঠাৎ মনে হল যে তার সাংঘাতিক খিদে পেয়েছে। কেয়ারটেকার একটি চৌকোনা টেবিল টেনে এক-এক করে খাবারগুলো রাখতে থাকেন।"খুব বেশী কিছু করতে পারি নি ভাই। ডিমের ঝোল, রুটি, আর আলু ভাজা এই ছেলেটিকে দিয়ে ভাজালাম; খাও।"

জয়ী ধন্যবাদ দিয়ে খেতে শুরু করল। খেতে-খেতে বাড়ির কথা মনে পড়ল। সে এখন "আন্ডার ইনভেস্টিগেশন", বাড়িতে কি বলবে সে? আর চাকরি, শেরগিল স্যার! তিনি তো পইপই করে বলেছিলেন যে, এই সমস্তের থেকে দূরে থাকতে, এতক্ষণে তিনি নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন। এতক্ষণের আতঙ্ক, ক্লান্তি সব মুছে গিয়ে এক অদ্ভুত অনুশোচনা গ্রাস করতে থাকে জয়ীকে।

"তোমরা কথা বল, আমি পাশের ঘরে আছি," জয়ীর দিকে স্নেহের একটি হাসি দিয়ে উনি চলে গেলেন।

"এইখানে এসে আমি ডি এস পি রাঠোরকে সমস্ত ঘটনা জানাই, মানে যতটুকু তোমার থেকে শুনেছিলাম আর কি," খেতে-খেতে বলতে থাকলেন অতুলবাবু "উনি এখনই আসছেন এইখানে, আর অতিরিক্ত কিছু সেপাই পাঠাচ্ছেন যাতে রাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় আর কি। আমাকে রিকোয়েস্ট করলেন যেন আমি ওনার আসা অবধি থাকি।"

"আমি আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দেব সেটাই বুঝতে পারছি না।" অস্ফুট স্বরে বলল জয়ী।

"দিও না। আমি চাইলে আরও অনেক কিছু করতে পারতাম। দুর্গা বা রজতের উপর হয়ত কোনও হামলাই হত না।" বিষণ্ণ ভাবে নীচের দিকে তাকিয়ে বললেন অতুলবাবু।

"আপনি কি কিছু আন্দাজ করতে পারছিলেন? বা পারছেন? আমি আপনাকে কিছু ই-মেইল করেছিলাম। এইখানে আসার আগে। একটিরও উত্তর পাইনি। নুরকেও আপনার আরদালি ফিরিয়ে দেন এই বলে যে, আপনি দেখা করতে পারছেন না। আর, আর আজকে, আপনি সেই মূহুর্তে কি করে এলেন, যে সময় আমি পালাচ্ছিলাম? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।" উত্তেজিত হয়ে বলল জয়ী।

চোখ বুঝলেন অতুলবাবু। তারপর বললেন, "দুর্গা খুব বেপরোয়া গোছের লোক, আমার বন্ধু স্থানীয় ছিল এ কথা আগেই বলেছি। তা এই দুর্গা প্রায় বছর তিনেক আগে..."

"আসামের ধুবরিতে ভৈরবের ব্যাপারটা আমি জানি অতুলবাবু," খাবারের দিক থেকে চোখ না সরিয়ে বলল জয়ী।

অতুলবাবু কিন্তু অবাক হলেন না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললেন, "জানি, বরং বলতে পার তোমার ওই মেইলই আমার চিন্তার মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে বেআইনি নিলামের কোনও মন্দ গ্যাং এর পাল্লায় পড়েছে দুর্গা, এমনকি আমরা যারা তাকে খুব কাছ থেকে জানতাম, আমি বল বা তোমার স্যার শেরগিলই বল, আমরা প্রত্যেকেই নিশ্চিত ছিলাম। শেরগিল তো আমায় খোঁজ নিয়ে জানিয়েছিল যে, দুর্গার নাকি বিস্তর ধার রয়েছে বাজারে। কিন্তু তোমার সাথে সেইদিন কথা বলার পর আমি থানার অফিসারের সাথে কথা বলি কেস ডিটেলস জানার জন্য। জানতে পারলাম যে, ওরা নিলামের বাজারে খোঁজ করে জেনেছে যে গত ৬ মাসে আইনি বা বেআইনি কোনও নিলামে অংশগ্রহণ করেনি দুর্গা। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। এর কিছুদিন পড়ে আমি রজতের সাথে যোগাযোগ করি, তাকে পুরো বিষয়টা জানাই। আমি শুনেছিলাম যে, সে-ই সমস্ত দায়িত্ব পেয়েছে দুর্গার সম্পত্তির। সে কথা দেয় যে, সে আমাকে ঐ ভৈরব সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য জানাবে। কিন্তু সেইরকম কোনও তথ্য রেখে যায়নি দুর্গা, তবে একটি সূত্র সে আমায় দিয়ে যায়। একটি লগ ডায়রি, এই ডায়রিতে তার ভ্রমণের যাবতীয় তথ্য থাকত। এ ছাড়া থাকত নতুন কোনও অ্যান্টিক জিনিস বেচাকেনার রেকর্ড। এই জিনিসগুলির মধ্যে একটি জিনিস খোয়া যায়। জিনিসটি একটি নবাবি কাস্কেট, পুলিশের তদন্তে এমনটাই উঠে আসে, কিন্তু একমাত্র আমি জানতাম যে, চুরি গেছে আরও দুর্মূল্য কিছু একটা জিনিস..." প্রায় একটানা বলে নিশ্বাস নিলেন অতুলবাবু।

"শশাঙ্কের শিলমোহর?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে জয়ী।

সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে কাতর ভাবে বলেন অতুলবাবু,"আমাকে দেখানোর সময় ঐ কাস্কেট থেকেই বার করেছিল সে। একটা সন্দেহ হয়, লগ ডায়রিতে ঐ কাস্কেটের ডেট-এর সাথে মিলিয়ে দেখি যে ঐ সময় দুর্গা আসামের কোনও এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিল। কাস্কেটটা ঐ সম্মেলনে মেমেন্টো হিসাবে পাওয়া। এন্ট্রি, তা প্রায় তিন বছর আগের।"

" তারপর..." জয়ীর গলা যেন শুকিয়ে আসছে।

"এরপর আমি ধুবরি যাই। শুধু রজত ও আমার স্ত্রী জানত আমার সেইখানে যাওয়ার কথা। আসামে আমার এক চেনা কিউরেটর ছিলেন, তাকে জানাই যে দুর্গামোহনের কাছে আমি কোটালপাড়ার খুব প্রশংসা শুনেছিলাম, সেইখানে দু এক দিন ছবি তুলতে যেতে চাই। কথায় কাজ হয়, ভদ্রলোক খুব আনন্দের সাথে আমাকে সেইখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। গ্রামে আমি খোঁজ খবর নেই ভালই, তুমি যে তথ্যগুলো দিয়েছিলে আমি মোটামুটি সেইরকমই ইঙ্গিত পাই গ্রামের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে। শুধু কয়েকটা বাড়তি জিনিস জানতে পারি। সেগুলো জানাই-
১। ধুবরির ডি এস পির সঙ্গে দুর্গাবাবুর পরিচয় হয় সেই সম্মেলনে, মূলত এই সম্মেলনে যোগ দিতেই গিয়েছিল সে। এই গ্রামের কিছু মানুষ উধাও হয়ে যাওয়ার কথা এবং পরবর্তীকালে তাদের একটিমাত্র অস্থি-বিহীন লাশের বিষয়টায় তাকে বেশ উৎসাহিত করে। তিনি ডি এস পিকে জানান যে, হয়তো এই ব্যাপারটায় তিনি সাহায্য করতে পারেন। তারপর থেকেই ঐ গ্রামে গবেষণার অজুহাতে থাকতে শুরু করেন। প্রায় ৩ মাস ধরে বহু প্রচেষ্টার পর এই সেক্টটাকে ট্র্যাক করে সে। তার বইতে যেমনটা লেখা আছে, ঠিক তেমন একটা দল ছিল এই ভৈরব। তন্ত্র, হিংসা, এমনকি ক্যানিবালিস্টিক প্রবণতাও থাকতে পারে এমনটাই সন্দেহ ছিল দুর্গার। এই দলটি মূলত আস্তিক, ধার্মিক নন, বা কুসংস্কার বিরোধী মানুষদেরই টার্গেট করত। তাদের একটিমাত্র অস্থি নিয়ে ভৈরবের মূর্তি গঠন করে তান্ত্রিক-বলে সর্বশক্তিমান হওয়ার উদ্দেশ্যে এমনটাই জেরায় স্বীকার করেছিল তারা।
২। এদের দলের পাণ্ডা, যে নিজেকে বিশ্ব বলে পরিচয় দিত, সে ছিল খানিকটা ডেলিরিয়াস, মানসিক ভাবে অসুস্থ গোছের; তার হাজত বাস হয়। তবে আমি যখন ধুবরি যাই তখন জানতে পারি যে এই বিশ্বর কেস নাকি রি-ওপেন হয়। অ্যাপিলের মাধ্যমে কোর্টে তার আইনজীবী প্রমাণ করে দেয় যে, এই সব কোনও খুনে এই বিশ্বের সরাসরি হাত নেই। সে ডেলিরিয়াস বলে ক্ষমতাবান কিছু মানুষ তার উপর নিজেদের দোষ চাপিয়ে দেন। মনস্ত্বত্ববিদদের যে কমিটি তৈরি করা হয় বিশ্বকে ক্লিন-চিট করার জন্য তারাও এক মত দেন। বিশ্ব জেল থেকে ছাড়া পায়। এবং এই ঘটনার মাস তিনেকের মধ্যে খুন হয় বিশ্বর পতনের মূল কারণ ডাঃ দুর্গামোহন মুখোপাধ্যায়।

জয়ীর মুখ হাঁ হয়ে গেছে। এই শীতকালের হিমেও তার কপালে বিন্দু-বিন্দু ঘামের ফোঁটা দেখা দিল। উত্তেজনায় বুক কাঁপছে তার। কাছেই কোথাও অন্ধকারে শেয়াল ডাকল বোধহয়। সার্কিট হাউসের টিমটিমে আলোগুলি যেন আরও ঢিমে হয়ে গেছে।

"আপনার কি মনে হয়, এই বিশ্বই?" জয়ী ধরা গলায় জিজ্ঞাসা করে।

চেয়ার থেকে উঠে বারান্দার ধারটায় দাড়িয়ে অতুলবাবু বলেন,"প্রায় ৮০ শতাংশ নিশ্চিন্ত হয়ে বলা যেতে পারে। তাছাড়া, আর একটা জিনিস আমায় সেই সময়ের ডি এস পি সাহেব জানান। এদের ডেরায় রেড করে পুলিশ বেশ কিছু জিনিস পায়, তাদের বেশীরভাগই তন্ত্র, শব-সাধনা ইত্যাদি নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ এইসবে কোনও উৎসাহ দেখায় নি। ফলে-
৩। এটা আমার থিয়োরি মাত্র – যে জিনিসগুলি দুর্গা পায় তার মধ্যেই ছিল জিনিসটি, সম্ভবত যেই জিনিসটির সাথে সেদিন সমগ্র দেশ পরিচিত হত; শশাঙ্কের শিলমোহর।"
Next Part


All Bengali Stories    116    117    118    119    120    121    122    123    (124)     125    126   


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717